যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’র ৩৩তম আসর

মুক্তধারা/জিএফবি সাহিত্য পুরষ্কার পেলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পুরষ্কারের আর্থিক মূল্য ৩,০০০ ডলার। 

যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’র ৩৩তম আসর
৩৩-তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বই মেলার উদ্বোধন করছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুক্রবার (২৪ মে) নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে।

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি: স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৪ মে) নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ৪ দিনব্যাপী ৩৩-তম নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বই মেলার উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার প্রবাসী লেখকদের প্রকাশিত প্রায় ১০ হাজার বই নিয়ে ৪০টি স্টল অংশ নিয়েছে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “বর্তমানে আমরা যে বাংলা ভাষাকে পাচ্ছি, তা হাজার বছর ধরে লিখিত আকারে বিবর্তিত হয়ে এসেছে উচ্চারিত ভাবে, প্রামাণ্য ভাবে। আর আমাদের যে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ বা অপরিমেয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য, যার প্রথম উপকরণ ভাষা। যে ভাষার নাম আমাদের জন্য বাংলা ভাষা, তা বিবর্তিত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই আমাদের জাতিসত্তা, আমাদের ব্যক্তিসত্তা, আমাদের ধ্বনিসত্তা বিবর্তিত হয়েছে।”

উদ্বোধনী পর্বে সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “নিউ ইয়র্কে মুক্তধারার ৩৩ বছর এ মেলা ধরে রাখা এবং প্রথম প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে একইসূত্রে বেঁধে রাখার এই যে প্রয়াস, তা অবশ্যই সময়ের প্রয়োজনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই যুগসূত্র আমার দেশ, আমার সংস্কৃতি, আমার বই, আমার সাহিত্য সবকিছুতে।”
এসময় অতিথির মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর দে, কথাসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর ও ওয়াশিংটন ডি.সিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
মেলায় মুক্তিযুদ্ধের চিত্র প্রদর্শনী পর্বের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী। অতিথিদের মেলা কমিটির পক্ষ থেকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া মেলার ৩৩তম আসর উপলক্ষ্যে ৩৩ জন অতিথি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ৪ দিনের অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন নুরুন্নবী ও কার্যনির্বাহী বিশ্বজিত সাহা। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও অভিনেতা আফজাল হোসেন প্রমুখ।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’র ৩৩তম আসর
মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার প্রধান আকর্ষণ মুক্তধারা/জিএফবি সাহিত্য পুরষ্কার। পুরষ্কারের আর্থিক মূল্যমান ৩,০০০ ডলার। এবার এই পুরষ্কার পেয়েছেন বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পুরস্কার পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ ও কলকাতার পর অভিবাসীদের বৃহত্তম এই আয়োজন আমাকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার দিয়েছেন । আমার লেখালেখি জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি এটি। পুরস্কার সব সময় নিয়মিত লেখার ক্ষেত্রে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগায়। তিনি আরও বলেন, নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা উদ্বোধন করতে ২০০৪ সালে একবার এসেছিলাম, সেবার যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে বইমেলা হয়েছিল, আমিও গিয়েছিলাম নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, লসএঞ্জালাস এবং ডালাসে। আমি দেখেছি বাঙালিদের মধ্যে এক ঐক্যের সুর গ্রথিত করেছে এই বইমেলা। সেই বইমেলা আমাকে পুরস্কার দিয়েছে আমি অনেক সম্মানিত বোধ করছি, আনন্দ লাগছে খুব।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’র ৩৩তম আসর
বইমেলার স্টলে উৎসাহী ক্রেতাদের ভিড়।

তিন দিনে ৪১ জন প্রকাশক বিক্রি করেছেন দুই লাখ ডলারের বাংলা বই। সোমবার রাতে শেষ হয়েছে ৩৩তম আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। বই বিক্রির সঙ্গে চলছে কবিতা পাঠ, সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বৈচিত্র্যময় সব আয়োজন। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের এ আয়োজন পরিণত হয়েছে বিশ্ব বাঙালির মিলন উৎসবে। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত সাহা বলেন, প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে আগত প্রকাশকদের বিনামূল্যে দেওয়া হয় বইমেলা স্টল। অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মধ্য থেকে একটি সংস্থাকে দেওয়া হয় চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা প্রকাশক পুরস্কার। এক হাজার ডলার মূল্য মানের এ পুরস্কার পেয়েছেন সময় প্রকাশনীর কর্ণধার ও সম্পাদক  ফরিদ আহমেদ । প্রকাশকরা অত্যন্ত খুশি। চার দিনের বইমেলার প্রথম দিন ছিল উদ্বোধন। তারপরে তিনদিনে ৪১টি প্রকাশনা সংস্থা বিক্রি করেছে ২ লাখ ডলারের বাংলা বই।
৩৩তম নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার আহবায়ক হাসান ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশ, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা কলকাতাসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে মেলায় এসেছেন সাহিত্যিক, প্রকাশক এবং দর্শনার্থীরা । বিতর্ক, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, একক সঙ্গীতা অনুষ্ঠান দর্শকদের আনন্দিত করেছে। আমার কাছে এবারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল নতুন প্রজন্মের ব্যাপক অংশগ্রহণ। আমরা আগামী মেলাগুলো তাদের হাতেই সমর্পণ করতে চাই। আগামী বছর একই স্থানে মে মাসের ২৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত চলে আন্তর্জাতিক এই বাংলা বইমেলার ৩৪ তম আসর।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’র ৩৩তম আসর
মেলা প্রাঙ্গণে প্রিয় লেখকের বইয়ে নিমগ্ন এক পাঠক।

মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এর প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন জানান, বইমেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডক্টর অধ্যাপক আ আ ম স আরিফিন সিদ্দিক, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সদস্য সচিব অভিনেত্রী সারা জাকের এবং অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন। একুশে পদক প্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফুর রহমান রিটনসহ শতাধিক গুণীজন। একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের পদ্মশ্রী প্রাপ্ত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লিলি ইসলাম এবং নিরুপমা রহমান।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন