বেশ খানিকটা দূরে মাঠের পাঁচিলের ধার ঘেঁষে জঙ্গলে নেমেছে কিছু একটা। জ্বলছে, নিভছে বেগুনি, সবুজ, গোলাপী, লাল আলো। তোজোর মনে হল, ওটা কোনও আকাশ-যান। আস্তে ভেসে আসছে ইঞ্জিনের শব্দ। কিছু অস্পষ্ট কথাবার্তার আওয়াজ।
(এক)
সকাল থেকে তোজোর দম ফেলার ফুরসত নেই। মোবাইলটা বেজেই চলেছে। একের পর এক ফোন। দীপ্র, শুভ, জয়, রাহুল, শ্রীজিতা সবাই জানতে চাইছে, কখন চিড়িয়াখানায় যাবে?
তোজোর কাছে আজ স্পেশাল ডে। চিড়িয়াখানার ক্যুইজ কনটেস্টে ফার্স্ট হয়ে সে গিফট পেয়েছে বাবু-কে। দর্শক মহলে বিপুল জনপ্রিয় শিম্পাঞ্জিকে আজ তার হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেবেন ডিরেক্টর। এক মাস দত্তক হিসাবে বাবুর মালিক হবে তোজো। এ কী কম কথা! বন্ধুরা সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে চায়। দলবেঁধে সবাই যাবে।
কিন্তু তোজো খুঁজছে তার রংবাজ-কে। কোথায় যে গেল ফড়িংটা? কেননা রংবাজ ছাড়া যে তোজোর গত কদিনের রাতের স্বপ্নের রহস্যভেদ হবে না।
বিচিত্র যত স্বপ্ন যার মাথামুন্ডু নেই। যেমন, চিড়িয়াখানায় পশুরাজের মনমেজাজ ভাল নেই। গোমড়া মুখে বসে আছেন। খেতে চাইছেন না। চিড়িয়াখানার ডাক্তারও ব্যাপারটা ধরতে পারছেন না। তাকে হাতপাখা নেড়ে দুধে গুলে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে বাবু। কিন্তু কিছুতেই খাবেন না পশুরাজ। বাবুকে দূর ছাই করছেন। আর বাবু বলছে, 'খেয়ে নিন মহারাজ। কবে আমার বাবা আপনাকে ফুটবল ম্যাচে লেঙ্গি মেরেছিল, সেজন্য আমার ওপর রাগ করে থাকবেন!' পশুরাজের দাবি, তাকে 'ঝুমে জো পঠান' গানের দৃশ্যটা দেখাতে হবে, তবে তিনি খাবেন। বাচ্চাদের মতো গুমরে গুমরে উঠছেন তিনি, ও সবার দেখা হয়ে গেছে তো! আমাকে কারও মনে নেই! চার বছর বাদে বেরল মারকাটারি ছবি। সে-ও বলিউডের কিং খান, আমি যেমন পশুরাজ। আর আমারই দেখা হল না! কিন্তু বাবুর মোবাইলে যে ইন্টারনেট কানেকশনই নেই! শেষমেষ রাগে দুধের গ্লাসটা পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিলেন পশুরাজ। স্বপ্নটা ভেঙে গেল ওখানেই।
আরেকদিন তোজো স্বপ্ন দেখল পশুরাজের খাঁচার সামনে ওদের পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়ে অহনাকে। সেজেগুজে গেছে। ম্যাচিং পোশাকের সঙ্গে হেয়ারব্যান্ড। তাতে ছোট ছোট প্লাস্টিকের ফুলের পাশে টুনি লাইট জ্বলছে, নিভছে। পশুরাজ ফিসফিস করে ওকে বলছে, তোর হেয়ারব্যান্ডটা একবার পরিয়ে দিবি আমায়। হেয়ারব্যান্ড পরে পশুরাজ ডেরার ভিতর থেকে একটা স্মার্টফোন এনে বলল, আমার একটা সেলফি তুলে দে না! ওখানেই স্বপ্নের ইতি।
কেন এমন স্বপ্ন দেখল, ভাবছে তোজো। আহা, সত্যিই এমন চমক যদি চিড়িয়াখানায় ঘটত!
(দুই)
তবে এর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সত্যিই এল একটা চমক, বিরাট দুঃসংবাদ। চিড়িয়াখানা থেকে তোজোর বাবাকে জানানো হল, বাবুকে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজকের অনুষ্ঠান স্থগিত থাকছে।
কয়েকদিন ধরে অবশ্য তোজোর মনে কু ডাকছিল। সে কেঁদে ফেলল। বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাবে কী করে? স্বান্তনা দিয়ে ঠাম্মি বোঝানোর চেষ্টা করলেন, বাবু যাবে কোথায়? চিড়িয়াখানারই কোথাও হয়তো আছে। ঠিক খোঁজ মিলবে। কিন্তু অবুঝ কিশোর মন তো শান্ত হতে চায় না।
(তিন)
হঠাত্ তোজোর মনে কয়েকদিন আগের রাতের একটা ঘটনা উঁকি মারল। বাবুকে গিফট পাবে, এ খবরে এতই সে আনন্দে মশগুল ছিল যে, ভুলেই গিয়েছিল।
তখন গভীর রাত। শীত পড়েছে। পাড়াটা নিস্তব্ধ। বাবা-মা-ঠাম্মি ঘুমিয়ে পড়েছে। ভুলোর জন্য ছাদেই গাছ-গাছালির মধ্যে ফেলে দেওয়া কম্বল, চাদর দিয়ে বিছানা করে দিয়েছেন মেজদাদু। তোজোর চোখে ঘুম। হঠাত তোজোর ঘরে ঢুকে তার কম্বল ধরে টানাটানি করে তাকে জাগিয়ে তুলল প্রিয় পোষ্য। তাকে টেনে নিয়ে গেল ছাদে, যেখান থেকে সামনে গল্ফ ক্লাব মাঠের অনেকটা দেখা যায়। কপিল দেব, ব্রায়ান লারারা কলকাতায় এসে ওই মাঠে গলফ খেলেছেন, বাবা, দাদুর মুখে শুনেছে তোজো। কিন্তু ঘন অন্ধকারে ঢাকা গল্ফ মাঠে তাকে কী দেখাতে চায় ভুলো? বেশ খানিকটা দূরে মাঠের পাঁচিলের ধার ঘেঁষে জঙ্গলে নেমেছে কিছু একটা। জ্বলছে, নিভছে বেগুনি, সবুজ, গোলাপী, লাল আলো। তোজোর মনে হল, ওটা কোনও আকাশ-যান। আস্তে ভেসে আসছে ইঞ্জিনের শব্দ। কিছু অস্পষ্ট কথাবার্তার আওয়াজ। তোজোর মনে হল, কাউকে নিয়ে ধস্তাধস্তি হচ্ছে। একটা জানোয়ার গোছের কিছু। তাকে ঘিরে কিছু চেহারা। গ্যাঁ, গ্যাঁ, গ্যাঙ্গোত, ঘ্যাঙ্গোত, ক্যাঁকোত, ব্রু, ব্রু--- এমন সব শব্দ শুনতে পেল। কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য সব স্তব্ধ। সেই যানটা উড়ে কোথায় চলে গেল।
কী হল সেদিন রাতে? অন্ধকারে কাউকে কি গল্ফ ক্লাব মাঠে মাটির নীচে পুঁতে দিয়ে গেল অচেনা চেহারাগুলো?
তোজোর বুকে হাতুড়ির ঘা পড়তে লাগল যেন। বাবুকে কেউ ওখানে মেরে পুঁতে দিয়ে যায়নি তো! কিন্তু কী করে সত্যিটা জানবে সে?
(চার)
'রংবাজ'-কে গিফট পেয়েছে তোজো। পতঙ্গবিদ, গবেষক ক্রিস্টিনা দত্তের কাছ থেকে। আশি পেরনো এই বৃদ্ধা তোজোর কাছে এক বিস্ময়। দাদাভাইকে নিয়ে যেদিন তোজো মহামায়াতলায় দাদাভাইয়ের বাবার পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল, সেদিনই তাঁকে প্রথম দেখে। পিসিমার বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। তোজো শুনেছিল, তাঁর চিড়িয়াখানা ঘোরার শখ হয়েছে। সেই কবে ছেলেমেয়েদের নিয়ে গিয়েছিলেন! তাঁকে বাবুকে দত্তক নেওয়ার দিন চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবে, সেকথা বলতেই গেছিল দাদাভাই, তোজো।
তিনি একটু কানো খাটো, তোজোকে সেদিনই প্রথম দেখলেন। 'তুই কে রে? ক্যান আইসস?' 'তোজো' নাম শুনে বললেন, 'খোঁজো! এ আবার ক্যামন নাম!' দাদাভাই কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে বলার পর বুঝতে পারলেন। ওদের মেঝেয় আসন পেতে বসিয়ে থালায় লুচি, তরকারি, পিঠে, পুলি সাজিয়ে দিলেন। হাতপাখা নিয়ে ওদের বাতাস করছিলেন।
(পাঁচ)
আচমকা 'কই রে তোজো, গাবলু?' বলতে বলতে বাইরে থেকে ঢোকেন ক্রিস্টিনা। হাতে লাঠি। বয়সের ভারে ঝুঁকে গেছেন। লম্বা, ফরসা, টিকোলো নাক, ধারালো দৃষ্টি। তোজো, দাদাভাই চমকে উঠল। উনি কী করে ওদের নাম জানলেন? বারান্দায় উঠে ঘরে মুখ বাড়িয়ে হাসিমুখে বললেন, জানতাম, তোরা দুটিতে আসবি। আমাকেও নিস না চিড়িয়াখানায়।
তোজো বিস্ময় চাপতে না পেরে তাঁকে বলেই বসল, আমাদের নাম জানলে কী করে? চিড়িয়াখানার কথাই বা কে বলল? তিনি হেসে ফেললেন, তোরা খালি চোখে দেখতে পাস না, বাতাসে এমন কত অসংখ্য পোকা-মাকড়, পতঙ্গ আছে, জানিস? ওরাই তো গুনগুনিয়ে তোদের নাম বলল! ওরা ছাড়াও আমার আরও সঙ্গী আছে। তোদের দেখাব। চল না আমার বাড়ি।
(ছয়)
ক্রিস্টিনার বাবা ব্রিটিশ, মা বাঙালি। একাই থাকেন। পিসিমার প্রতিবেশী। এলাকার লোকজন আড়ালে নানা আলোচনা করে তাঁকে নিয়ে। এর কারণ, তিনি বড় একটা পাড়ায় মেশেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় পোকা-মাকড়, ফুল-পাখী নিয়েই থাকেন। গুঞ্জন আছে, রাতে নাকি তাঁর বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ছায়ামূর্তি ঘোরাফেরা করে। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে বিদঘুটে শব্দ করে। একজন কাজের লোক বাজার-হাট, বাড়ির সব কাজ সামলায়। তাছাড়া, বাড়িতে পড়শীদেরও ঢুকতে দেন না তিনি। যা প্রয়োজন, বাড়ির দরজায় মিটিয়েই তাঁদের ফেরত্ পাঠিয়ে দেন। আড়ালে তাঁকে ক্ষ্যাপা বুড়ি বলে ডাকে পাড়ার ছেলে-ছোকরারা।
পিসিমা একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন, 'আইজ থাক না, আরেকদিন যাইবো না হয়!' কিন্তু তাঁর আপত্তি টিকল না, তোজোদের শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে নিয়েই ছাড়লেন ক্রিস্টিনা। পেল্লাই বাড়ি। অনেক জায়গায় দেওয়ালে ফাটল। গাছের শিকড়বাকড় বেরিয়েছে। বিশাল বিশাল ঘর। হা হয়ে গেল ওরা। কতগুলো ঘর তো বন্ধই পড়ে আছে। ক্রিস্টিনার বসার ঘরটা বইয়ে ঠাসা, দেওয়াল, বিছানা, টেবিলজুড়ে শুধু বই আর বই। রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন, মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলার ছবি দেওয়ালে। নিউটন, আইনস্টাইন, ডারউইনের ছবিও ঝুলছে। গবেষণা কক্ষে অ্যাকোরিয়ামে নানা কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়। টেস্ট টিউব। বার্নার। একটা ঘরে আবার নানা দেশের পতাকা, আদিম জনজাতিদের মুখোশ, অস্ত্রশস্ত্র। ওদের মধ্যে নাকি বেশ কয়েকটা বছর কাটিয়েছিলেন। ওগুলো সব উপহার পাওয়া।
(সাত)
তোজোরা ঘুরে ঘুরে সব দেখছিল। সঙ্গে ক্রিস্টিনার কাজের লোক। নাম টম। তার হাঁটাচলা, তাকানো যেন ঠিক মানুষের মতো নয়। কণ্ঠস্বরটাও কেমন। বহু দূর থেকে ভেসে আসছে যেন। তোজোদের নজরে এল, একটা ঘর থেকে সুড়ঙ্গের রাস্তা নেমে গিয়েছে। সেদিকে পা বাড়াচ্ছিল, কিন্তু টম হিমশীতল চাহনিতে নিষেধ করল। তোজোর একটু খটকা লাগল। একটা ঘরে নানা চেহারার পুতুল। স্থির। তোজো ওদের মধ্যে ঘুরছিল। আচমকা যেন বেঁটে ভল্লুকটা পিছন থেকে তার জামা ধরে টান মারল! তোজো স্পষ্ট দেখল, নীল চোখো বিড়ালটা হাই তুলল। এও সম্ভব!
ক্রিস্টিনা জোর করে ওদের আখের রস দিলেন। 'আমার ভাই লেন্ডল থাকে মরিশাসে। ওখানে প্রচুর আখ ফলে। কদিন আগেই তো ঘুরে গেল,' বললেন ক্রিস্টিনা। তোজো মণীষীদের ছবি দেখায় মগ্ন ছিল। সম্বিত ফিরল ক্রিস্টিনার কথায়, 'তোরা প্রথম এলি আমার বাড়িতে। বল কী গিফট চাই?' তোজোর ইচ্ছে, অভিনব এমন কিছু নেবে যা অন্য কারও কাছে নেই। দাদাভাইয়ের বিশেষ কিছু চাই না। তোজোর মনের কথা জেনে ক্রিস্টিনা বেল বাজিয়ে তাঁর কাজের লোকটাকে ডেকে বললেন, 'ডেভিড আর রংবাজকে নিয়ে আয় তো!'
(আট)
তোজো, দাদাভাই চমকে উঠল। ডেভিড নামে যাকে টম নিয়ে এসেছে, সে অবিকল তারই মতো দেখতে। কে টম আর কে ডেভিড, বোঝাই দুষ্কর। আর টেবিলের ওপর রাখা কাচের বাক্সে একটা ফড়িং।
ক্রিস্টিনা বললেন, টম আর ডেভিডের মধ্যে একজন মানুষ, অন্যজন যন্ত্র-মানুষ। বল দেখি, কে কোনটা? ঠিক হলে একটা গিফট পাবি। ধন্দে পড়ে গেল ওরা। ক্রিস্টিনা বললেন, তোরা ভাব। ততক্ষণে আমি ফড়িংটাকে একটু খেতে দিই। ক্রিস্টিনা উঠে গিয়ে বাক্সের দরজাটা খুলে একটা শিশি থেকে ড্রপারে বেশ খানিকটা মধু নিয়ে ঢেলে দিলেন একটা ছোট বাটিতে। সেখান থেকে ফড়িংটা মধু খেতে শুরু করল। মধুর খুব মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল ঘরে।
আচমকা টম, ডেভিড দুজনেই ঝাঁপিয়ে পড়ল শিশিটার ওপর। ধস্তাধস্তির মধ্যে টম এমনভাবে ডেভিডের গলা টিপে ধরল যে, তার চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। 'উঃ পারছি না, ছাড়, ছাড়!' বলে উঠল ডেভিড। কোনওক্রমে টমের ফাঁস থেকে নিজেকে মুক্ত করে হাঁফাতে লাগল ডেভিড। টমের কোনও ভাবান্তর নেই। তোজো নিশ্চিত, ডেভিড মানুষ, টমই যন্ত্র-মানুষ। বাঃ একেবারে ঠিক বলেছিস, বললেন ক্রিস্টিনা। এবার বল, টম না রংবাজ, কাকে চাস?
টমকে নিতে চাইল না ওরা। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর কী করে বসে কে জানে! তখন সামলাবে কে? রংবাজকেই নিল।
নয়)
রংবাজের শরীরে বিচিত্র রঙের আলপনা। রামধনুকেও সে হার মানায় রঙের জেল্লায়। ক্রিস্টিনা বললেন, বাতাসে যখন রংবাজ উড়ে বেড়াবে, দেখবি ওর ডানায় সূর্যের আলো পড়ে কেমন রঙের বিস্ফোরণ হবে। রংবাজ যেমন তেমন পতঙ্গ নয়, ওর অদ্ভূত ক্ষমতা আছে। ও রং ঝরাতে পারে পিচকিরির মতো, ধোঁয়া ছাড়তে পারে, সূঁচের মতো তীক্ষ্ম শুঁড়ের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে। ওর আরেকটা ক্ষমতা হল, জন্তুজানোয়ার, মানুষের বুকের ওপর বসে তাদের মনের কথা টের পায়, রেকর্ডও করতে পারে, ছবি তুলতে পারে। ওর চোখে তাকাবি। যা যা রেকর্ড করেছে, সব দেখতে, শুনতেও পাবি। তবে ওকে কিন্তু বাক্সে আটকে রাখবি না। উড়তে দিবি, ও ঠিক সময় মতো ফিরে আসবে।
তোজোর কিন্তু জানা হল না, রংবাজ সত্যিকারের ফড়িং না প্রযুক্তির সৃষ্টি? নাকি দুয়ের মিশেল? ক্রিস্টিনাও কি এই ধুলোমাটির পৃথিবীর কেউ না কোনও অজানা দুনিয়ার কেউ?
(দশ)
এর মধ্যেই তোজোকে কে বা কারা একটা হুমকি-চিঠি দিয়েছে। কাঁপা, কাঁপা হাতে বাংলায় লেখা চিঠির মর্মার্থ, বাবুকে ভুলে যাও। ওকে আর দেখতে পাবে না। ওকে রোবট বানানো হবে! আর এমন দিন আসছে যখন গোটা দুনিয়া শাসন করবে রোবটরা। তোজো চোখ বুজে কল্পনা করল, রাস্তায় রাস্তায় রোবটরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই কি এমন ভয়ঙ্কর দিন আসছে?
(এগারো)
তোজোর অনুমান, বাবু অন্তর্ধান, গল্ফক্লাব মাঠের সেই রাতের ঘটনা, হুমকি-চিঠির মধ্যে কোনও যোগ আছে। রংবাজ-কে নিয়েই বাবু-অন্তর্ধান রহস্য ভেদে নামবে সে। ভুলো থাকবে। ওরা গলফ ক্লাব মাঠের সিকিউরিটি এজেন্সির কর্তাকে ধরল পাড়ার কমলদাদুর সোর্সে। তিনি পূজারী ব্রাহ্মণ। গল্ফক্লাবের বিভিন্ন পুজো পার্বনের প্রধান পুরোহিত তিনি। 'কোথাকার একটা বাচ্চা ছেলে, কী না কী বলছে!'- তোজোর আর্জি শুনে তো প্রথমে পাত্তাই দিতে চাননি সিকিউরিটি হেড। কমলদাদুর পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হলেন। বললেন, ঠিক আছে। ছেলেটা বলছে যখন, তখন পাঁচিলের ধারে জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে দেখা যাক! সামনের রোববার দুপুর। আমি থাকব। আমার লোকজন মাটি খুঁড়বে।
(বারো)
মাটি খুঁড়তে গিয়েই বাধা। কোদাল, শাবল হাতে সিকিউরিটির লোকজনকে দেখেই শিমূল গাছটা থেকে যে নেমে এল, তাকে দেখে তো তাজ্জব তোজোরা। একটা অদ্ভূত দর্শন আধা মানুষ, আধা-যন্ত্র। মাথাটা চকচকে, মুখভর্তি দাড়ি, চোখদুটো যেন নীল পাথর। জ্বলছে, নিভছে। রংবাজ-কে দেখেই তার রাগ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। নীল পাথুরে চোখদুটো ক্রমশঃ রাগে লাল। মুখ থেকে আগুনের গোলা বেরচ্ছে। তোজো ছায়া দেশ থেকে পাওয়া কালো চশমা দিয়ে দেখল, তার বুকে দুটো পেসমেকার বসানো। ফুসফুস আছে। শিরা, ধমনীতে রক্তও বইছে। মস্তিষ্কের খানিকটা অসংখ্য নার্ভে ভর্তি, আবার অজস্র তার, চুম্বক, খোপওয়ালা বাক্সও আছে। হাত-পা তামা বা দস্তাজাতীয় পদার্থে তৈরি মনে হল। এমন অদ্ভূত খাপছাড়া সৃষ্টি কার! প্রবল আক্রোশে সে তোজোদের রাস্তা আটকে দাঁড়াল। ভয়ে সিকিউরিটির লোকজন পিছতে শুরু করল। তখনই পাল্টা আঘাত রংবাজের। প্রথমে সে ভস ভস করে ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করল। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে অদ্ভূত জীবটা আক্রোশে ফোঁস ফোঁস করতেই রংবাজ পিচকিরির মতো রং ছুঁড়ছে। লাল, কালো, নীল, বেগুনি, সবুজ রং। সেইসঙ্গে পিছন থেকে জীবটার গায়ে ছুঁচলো শুঁড় দিয়ে একের পর এক আঘাত। খোঁচা খেতে খেতে আর্তনাদ করে জীবটা মাটিতে আছড়ে পড়ে ভেঙে চুরচুর হয়ে গেল। আর কী চমক! ধোঁয়া কেটে যেতেই তার কোনও চিহ্নই নেই। তবে ঘটনাস্থলে পড়ে আছে একটা রিমোট। আচমকা তোজোর নজরে পড়ল শিমূল গাছের গায়ে চক দিয়ে লেখা একটা সাংকেতিক সংখ্যা! Chri9900111777. এটা কি তবে কোনও গোপন আস্তানার দরজা খোলার সূত্র? কপাল ঠুকে তোজো গাছের নীচে দাঁড়িয়ে রিমোটে সংখ্যাগুলি বসিয়ে সবুজ বোতাম টিপতেই সামনের মাটি সরতে শুরু করল।
১৩
তোজোরা ঝুঁকে পড়ে দেখল, একটা সিঁড়িপথ মাটির গভীরে নেমে গিয়েছে। দুজন বন্দুকধারীকে নিয়ে সিকিউরিটি হেড তোজো, ভুলোর সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে নামলেন। বেশ কয়েকটা ধাপ নামার পর ওরা দেখল ভিতরে রীতিমতো ঘরবাড়ি আছে! সবই অবশ্য কাচের ঘর। কিন্তু কারা থাকে এখানে? কোনও ঘর থেকে আবার টিভির শব্দ আসছে। সন্তর্পনে পা টিপে টিপে ওরা দু-তিনটে ঘর ছাড়িয়ে ভিতরে ঢুকতেই চমকে গেল। দেখল, একটা ঘরে দেওয়ালজুড়ে টিভি। তাতে পাঠান চলছে। সামনে বাধ্য ছেলের মতো দেওয়ালে হেলান দিয়ে বিছানায় বাবু! পাশে টেবিলে গ্লাসে ফলের রস। তারিয়ে তারিয়ে ছবিটা উপভোগ করছে। ওকে ঘিরে বেশ কয়েকটা রোবট। সেগুলোর আবার ডানা আছে। তাহলে নিশ্চয়ই উড়তে পারে। বাবু শাহরুখ-দীপিকার উদ্দাম নাচে মশগুল। কিন্তু নাচ শেষ হতেই কেমন উসখুশ শুরু হল। হাতে স্যামসাঙের মোবাইল নিয়ে স্ক্রল করছে। আনমনা। তার মধ্যেই হঠাত্ দুটো রোবট ওর দুহাত চেপে ধরে পটপট করে দুটো ইঞ্জেকশন পুশ করে দিল। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার মধ্যে তোজোরা লুকিয়ে সব দেখতে থাকল। একটু বাদেই বাবু ঝিমোতে ঝিমোতে ঘুমে ঢলে পড়ল। তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রোবটগুলো বাবুর মাথায়, বুকে, হাতে পায়ে নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে একটা বড় মেশিন চালু করে আলো-টিভি নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাবু নিঃসাড়। ওরা কি বাবুকে রোবট করে তুলছে?
১৪
তোজোরা সবটা মোবাইলে ভিডিও করে রাখল। আরও কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করল ওরা কিছু হয় কিনা দেখার জন্য। বাবু যখন পাঠান দেখছিল, তখনই রংবাজ তার বুকের ওপর বসে তার মনের কথা রেকর্ড করেছে। বাবু বা রোবটগুলি কিচ্ছু টের পায়নি। পাছে কেউ ওদের উপস্থিতি টের পায়, সেজন্য প্রায় আধ ঘণ্টা মোবাইল সুইচ অফ রেখে অপেক্ষায় রইল তোজোরা। রংবাজ মাঝেমধ্যেই কোথায় উধাও হয়ে যাচ্ছে, আসছে। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু রেকর্ড করছে। হঠাত্ ঘরের একটা আলো জ্বলে উঠল। আবছা আলোয় দেখা গেল, একটা আলখাল্লা জাতীয় পোশাক পরা কেউ এসে বাবুর মাথায় লাগানো মেশিন খুলে আরেকটা মেশিন পরিয়ে দিল। শরীরের বাকি সব যন্ত্র, তার খুলে কোনও মলম লাগাল অনেকক্ষণ ধরে। এরপর একেবারে রোবটের মতো দেখতে চকচকে পোশাক পরিয়ে দিল বাবুকে। আলখাল্লাধারীকে চেনা গেল না। বাবু যথারীতি অচেতন। কিছুক্ষণ পর এক রোবট এসে বাবুর মুখে সিরাপজাতীয় ওষুধ ঢেলে দিল। সিরাপ পেটে যেতেই বাবু উঠে বসল। বিস্মিত। মনে হয়, যেন কোনও অচেনা দেশে এসেছে। বিছানা থেকে মেঝেতে পা ফেলে হাঁটছে রোবটের মতো। হাত দুটোও নাচাচ্ছে রোবটের কায়দায়। একটা আয়নায় নিজেকে দেখে কাঁধ ঝাঁকাল। সঙ্গে সঙ্গে সেই রোবটগুলো এসে ওকে ধরে জোর করে বিছানায় বসিয়ে চেন দিয়ে বেঁধে রেখে কোথায় চলে গেল।
১৫
তোজোরা ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল, এখানে বসে না থাকে বরং রোবটগুলিকে ফলো করে দেখা যাক। ওদের ডেরাটা কোথায়? কাচের ঘরগুলি পেরিয়ে ওরা একটা এবড়োখেবড়ো রাস্তায় এসে পড়ল। মাটির নীচে কারা বানাল রাস্তা? অনেকগুলো সাইকেল পড়ে আছে রাস্তার পাশে। একটায় চড়ে বসল তোজো। আরেকটায় সেই সিকিউরিটি হেড। সাইকেলের প্যাডেলে পা দিতেই আপনা থেকে চলতে শুরু করল। সাঁ সাঁ করে ঝড়ের বেগে সাইকেল ছুটছে। কিন্তু রোবটগুলো কোথায় সরে পড়ল? নাকি ওদের চেয়েও বেশি গতিতে উড়ে ডেরায় ঢুকে পড়েছে? এরপর সাইকেল যেখানে এসে থামল, জায়গাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে তোজোর। আরে এ তো ক্রিস্টিনার বাড়ির সেই সুড়ঙ্গের মুখ! তবে কি রোবটগুলো ক্রিস্টিনার বাহিনী? ওই বাড়িতে সেঁধিয়ে আছে? বাবুকে লোপাট করার পিছনে হাত আছে ক্রিস্টিনার? দরজায় কান পেতে তোজোরা শুনতে পেল, রোবটগুলো আউ, আউ, হাউ, যাউ, পাউ- অবোধ্য ভাষায় কী সব বলছে। কাকে বলছে?
১৬
রাতে বাড়ি ফিরে রংবাজ-এর চোখ দিয়ে বাবুর মনের কথা শুনল তোজোরা। বাবু পাঠান দেখতে দেখতে ভাবছে, 'কী যেন নাম বাচ্চাটার, অহনা না গহনা, ভ্যালেন্টাইনস ডে চলে গেল, ও তো এল না! বলেছিল, দেবে একটা তাজা গোলাপ, এল না, এল না, হলই না আলাপ। আর তো থাকব না জানোয়ার, বদলে হব রোবট, আশা পূরণ হল না আর, হলাম খুব শকড!'
ও, তাহলে এই বাবুর মনের দুঃখ, যার ক্ষতে প্রলেপ দিতেই 'ঝুমে জো পাঠান!'
তোজোরা ঠিক করল, তাহলে অহনাকে গোলাপ হাতে বাবুর কাছে পাঠালে হয়তো বাবুর কষ্ট দূর হবে।
তার আগে সে পুলিশ মামাকে সব জানাল। ঠিক করল, বাবুকে পুরোপুরি রোবটগুলোর হাত থেকে মুক্ত করেই চিড়িয়াখানায় খবর দেবে।
১৭
পরদিন অহনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে হাতে বেশ কয়েকটা গোলাপ দিয়ে তোজোরা আবার সেই মাটির তলার রোবট-পাড়ায় ঢুকল। কাচের ঘরের দিকে তাকাতেই দেখল, বাবু ছটফট করছে। রোবটগুলোর মধ্যেও তুমুল ব্যস্ততা। সম্ভবতঃ বাবুকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল মেলেনি। রোবট বানাতে গিয়ে উল্টো ফল হয়েছে। বাবুকে বাগে আনা যাচ্ছে না। সে হিংস্র হয়ে হাত পা ছুঁড়ছে। কয়েকটা রোবটকে ঘুঁসি মেরে মাটিতে ফেলে দিল বাবু। কয়েকটা রোবট দরজা খুলে ছুটে পালাতে গিয়ে পড়ল রংবাজের সামনে। রংবাজ শুঁড় বের করে ওদের তাড়া করে ঘরে আটকে রাখল। ভয়ে বিভ্রান্ত, দিশাহারা রোবটগুলো শান্ত। আর ঠিক সেই সময়ই অহনা গোলাপ নিয়ে দাঁড়াল বাবুর সামনে। কোথায় সেই উগ্রচণ্ডা রূপ, সে কী মুগ্ধ অভিব্যক্তি বাবুর। গন্ধে ম ম করছে ঘরটা। বাবু হাত বুলিয়ে দিল অহনার মাথায়। গন্ধ পেয়ে রোবটগুলোও মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে এল। হাতে গোলাপের পাপড়ি নিয়ে এর ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মাথা নাড়তে লাগল।
বাবুকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল তোজোরা। গোলাপে মাতাল রোবটরা বাধা দিতেই যেন ভুলে গেল। বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির। খবর পেয়ে চিড়িয়াখানার লোকরা বিরাট খাঁচা নিয়ে এসেছে। এলাকার লোকজন বাবু দর্শনে হামলে পড়েছে। টিভি চ্যানেলগুলিও আছে।
১৮
কিন্তু রংবাজ কোথায়? তোজোরা তন্নতন্ন করে খুঁজল। কিন্তু তার দেখা নেই। অশান্ত মনে ভুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরল তোজো। বাড়ি ফিরে দেখল, বাবা-মায়ের মুখ গম্ভীর। নীরবতা ভেঙে মা জানালেন, পিসেমশাইয়ের মহামায়াতলার পিসিমা ফোন করেছিলেন, ক্রিস্টিনা দত্ত আজ দুপুরে মারা গিয়েছেন। গুলি করেছেন নিজেকেই। তাঁর বুকের ওপর পড়ে আছে একটা ফড়িং। প্রাণহীন। তোজো বুঝল, রংবাজ আর ক্রিস্টিনা একই হৃদয়ের সুতোয় বাঁধা। দুজনেই একসঙ্গে চলে গেল।
ক্রিস্টিনার দেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে গেল পুলিশ। কিন্তু সেখানেও চমক। লাশ কাটা ঘরে কয়েক ঘণ্টা পর গিয়ে দেখা যায়, ক্রিস্টিনা নেই, বদলে পড়ে আছে একটা গুলিবিদ্ধ কাচের পুতুল!
১৯
মৃত রংবাজের অপলক চোখে একটা মেসেজ দেখতে পেল তোজো---- 'এবার হল না, আবার ফিরব। বাবুকে একদিন তো বাগে পাবই, ওকে রোবট বানাবই। রংবাজটা বেইমানি করল এভাবে! নিজেও মরব, ওকেও বেঁচে থাকতে দেব না। আমার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে ও।'
আর রংবাজের মনের কথাও পড়ল তোজো। '--নিজের আয়ু দিয়ে আমায় তৈরি করেছেন। কিন্তু ক্রিস্টিনার মানুষকে রোবট শাসনে বশ করার বাসনা মানতে পারি না। মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কেন? মানুষ মানুষ থাকলে ক্ষতি কী?'
২০
তোজো হতভম্ব। তাহলে এত কিছুর পিছনে ক্রিস্টিনাই! তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর পায়নি সে। পুলিশি তদন্ত চলল কিছুদিন। পরে পুলিশ মামা তোজোকে এমন সব তথ্য দিলেন যা তোজোর শিরদাঁড়ায় হিমেল স্রোত বইয়ে দিল। পুলিশবাহিনী গলফ ক্লাব মাঠের নীচের কাচের ঘর, মহামায়াতলার পোড়ো বাড়ির সব ঘর তল্লাশি করে দেখেছে, সেখানে একটা বন্ধ ঘরে অসংখ্য রোবটের ভাঙাচোরা টুকরো, জারে তরল রাসায়নিকে ভেজানো মানবমস্তিষ্ক, পেসমেকার, ব্যাটারি পাওয়া গিয়েছে। কিছু কিছু রোবটে মানবমস্তিষ্ক লাগানো। প্রচুর ইঞ্জেকশন মিলেছে যা দিয়ে মানুষের স্মৃতিলোপ করা যায়। আর মিলেছে মাটি কাটার যন্ত্রও।
ক্রিস্টিনার একটা ডায়েরিও উদ্ধার হয়। তার একটা পৃষ্ঠায় কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, পৃথিবীতে অনেকদিন কাটালাম মানবীর রূপ নিয়ে। মানুষকে রোবট বানানোর প্ল্যান নিয়ে এসেছিলাম। এমন দিন দেখতে চাই, পৃথিবীতে মানুষের ওপর শাসন চলবে রোবটের। আর আমার পদানত থাকবে রোবটকূল। জানি না, স্বপ্ন কবে সফল হবে।
এসব শুনে পিসিমার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, রামো, রামো! কার পাশে অ্যাদ্দিন ছিলাম? রবিবারই সত্যনারায়ণ পূজা দিয়া বাড়িটা শুদ্ধ করুম!
(এক)
সকাল থেকে তোজোর দম ফেলার ফুরসত নেই। মোবাইলটা বেজেই চলেছে। একের পর এক ফোন। দীপ্র, শুভ, জয়, রাহুল, শ্রীজিতা সবাই জানতে চাইছে, কখন চিড়িয়াখানায় যাবে?
তোজোর কাছে আজ স্পেশাল ডে। চিড়িয়াখানার ক্যুইজ কনটেস্টে ফার্স্ট হয়ে সে গিফট পেয়েছে বাবু-কে। দর্শক মহলে বিপুল জনপ্রিয় শিম্পাঞ্জিকে আজ তার হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেবেন ডিরেক্টর। এক মাস দত্তক হিসাবে বাবুর মালিক হবে তোজো। এ কী কম কথা! বন্ধুরা সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে চায়। দলবেঁধে সবাই যাবে।
কিন্তু তোজো খুঁজছে তার রংবাজ-কে। কোথায় যে গেল ফড়িংটা? কেননা রংবাজ ছাড়া যে তোজোর গত কদিনের রাতের স্বপ্নের রহস্যভেদ হবে না।
বিচিত্র যত স্বপ্ন যার মাথামুন্ডু নেই। যেমন, চিড়িয়াখানায় পশুরাজের মনমেজাজ ভাল নেই। গোমড়া মুখে বসে আছেন। খেতে চাইছেন না। চিড়িয়াখানার ডাক্তারও ব্যাপারটা ধরতে পারছেন না। তাকে হাতপাখা নেড়ে দুধে গুলে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে বাবু। কিন্তু কিছুতেই খাবেন না পশুরাজ। বাবুকে দূর ছাই করছেন। আর বাবু বলছে, 'খেয়ে নিন মহারাজ। কবে আমার বাবা আপনাকে ফুটবল ম্যাচে লেঙ্গি মেরেছিল, সেজন্য আমার ওপর রাগ করে থাকবেন!' পশুরাজের দাবি, তাকে 'ঝুমে জো পঠান' গানের দৃশ্যটা দেখাতে হবে, তবে তিনি খাবেন। বাচ্চাদের মতো গুমরে গুমরে উঠছেন তিনি, ও সবার দেখা হয়ে গেছে তো! আমাকে কারও মনে নেই! চার বছর বাদে বেরল মারকাটারি ছবি। সে-ও বলিউডের কিং খান, আমি যেমন পশুরাজ। আর আমারই দেখা হল না! কিন্তু বাবুর মোবাইলে যে ইন্টারনেট কানেকশনই নেই! শেষমেষ রাগে দুধের গ্লাসটা পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিলেন পশুরাজ। স্বপ্নটা ভেঙে গেল ওখানেই।
আরেকদিন তোজো স্বপ্ন দেখল পশুরাজের খাঁচার সামনে ওদের পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়ে অহনাকে। সেজেগুজে গেছে। ম্যাচিং পোশাকের সঙ্গে হেয়ারব্যান্ড। তাতে ছোট ছোট প্লাস্টিকের ফুলের পাশে টুনি লাইট জ্বলছে, নিভছে। পশুরাজ ফিসফিস করে ওকে বলছে, তোর হেয়ারব্যান্ডটা একবার পরিয়ে দিবি আমায়। হেয়ারব্যান্ড পরে পশুরাজ ডেরার ভিতর থেকে একটা স্মার্টফোন এনে বলল, আমার একটা সেলফি তুলে দে না! ওখানেই স্বপ্নের ইতি।
কেন এমন স্বপ্ন দেখল, ভাবছে তোজো। আহা, সত্যিই এমন চমক যদি চিড়িয়াখানায় ঘটত!
(দুই)
তবে এর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সত্যিই এল একটা চমক, বিরাট দুঃসংবাদ। চিড়িয়াখানা থেকে তোজোর বাবাকে জানানো হল, বাবুকে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজকের অনুষ্ঠান স্থগিত থাকছে।
কয়েকদিন ধরে অবশ্য তোজোর মনে কু ডাকছিল। সে কেঁদে ফেলল। বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাবে কী করে? স্বান্তনা দিয়ে ঠাম্মি বোঝানোর চেষ্টা করলেন, বাবু যাবে কোথায়? চিড়িয়াখানারই কোথাও হয়তো আছে। ঠিক খোঁজ মিলবে। কিন্তু অবুঝ কিশোর মন তো শান্ত হতে চায় না।
(তিন)
হঠাত্ তোজোর মনে কয়েকদিন আগের রাতের একটা ঘটনা উঁকি মারল। বাবুকে গিফট পাবে, এ খবরে এতই সে আনন্দে মশগুল ছিল যে, ভুলেই গিয়েছিল।
তখন গভীর রাত। শীত পড়েছে। পাড়াটা নিস্তব্ধ। বাবা-মা-ঠাম্মি ঘুমিয়ে পড়েছে। ভুলোর জন্য ছাদেই গাছ-গাছালির মধ্যে ফেলে দেওয়া কম্বল, চাদর দিয়ে বিছানা করে দিয়েছেন মেজদাদু। তোজোর চোখে ঘুম। হঠাত তোজোর ঘরে ঢুকে তার কম্বল ধরে টানাটানি করে তাকে জাগিয়ে তুলল প্রিয় পোষ্য। তাকে টেনে নিয়ে গেল ছাদে, যেখান থেকে সামনে গল্ফ ক্লাব মাঠের অনেকটা দেখা যায়। কপিল দেব, ব্রায়ান লারারা কলকাতায় এসে ওই মাঠে গলফ খেলেছেন, বাবা, দাদুর মুখে শুনেছে তোজো। কিন্তু ঘন অন্ধকারে ঢাকা গল্ফ মাঠে তাকে কী দেখাতে চায় ভুলো? বেশ খানিকটা দূরে মাঠের পাঁচিলের ধার ঘেঁষে জঙ্গলে নেমেছে কিছু একটা। জ্বলছে, নিভছে বেগুনি, সবুজ, গোলাপী, লাল আলো। তোজোর মনে হল, ওটা কোনও আকাশ-যান। আস্তে ভেসে আসছে ইঞ্জিনের শব্দ। কিছু অস্পষ্ট কথাবার্তার আওয়াজ। তোজোর মনে হল, কাউকে নিয়ে ধস্তাধস্তি হচ্ছে। একটা জানোয়ার গোছের কিছু। তাকে ঘিরে কিছু চেহারা। গ্যাঁ, গ্যাঁ, গ্যাঙ্গোত, ঘ্যাঙ্গোত, ক্যাঁকোত, ব্রু, ব্রু--- এমন সব শব্দ শুনতে পেল। কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য সব স্তব্ধ। সেই যানটা উড়ে কোথায় চলে গেল।
কী হল সেদিন রাতে? অন্ধকারে কাউকে কি গল্ফ ক্লাব মাঠে মাটির নীচে পুঁতে দিয়ে গেল অচেনা চেহারাগুলো?
তোজোর বুকে হাতুড়ির ঘা পড়তে লাগল যেন। বাবুকে কেউ ওখানে মেরে পুঁতে দিয়ে যায়নি তো! কিন্তু কী করে সত্যিটা জানবে সে?
(চার)
'রংবাজ'-কে গিফট পেয়েছে তোজো। পতঙ্গবিদ, গবেষক ক্রিস্টিনা দত্তের কাছ থেকে। আশি পেরনো এই বৃদ্ধা তোজোর কাছে এক বিস্ময়। দাদাভাইকে নিয়ে যেদিন তোজো মহামায়াতলায় দাদাভাইয়ের বাবার পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল, সেদিনই তাঁকে প্রথম দেখে। পিসিমার বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। তোজো শুনেছিল, তাঁর চিড়িয়াখানা ঘোরার শখ হয়েছে। সেই কবে ছেলেমেয়েদের নিয়ে গিয়েছিলেন! তাঁকে বাবুকে দত্তক নেওয়ার দিন চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবে, সেকথা বলতেই গেছিল দাদাভাই, তোজো।
তিনি একটু কানো খাটো, তোজোকে সেদিনই প্রথম দেখলেন। 'তুই কে রে? ক্যান আইসস?' 'তোজো' নাম শুনে বললেন, 'খোঁজো! এ আবার ক্যামন নাম!' দাদাভাই কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে বলার পর বুঝতে পারলেন। ওদের মেঝেয় আসন পেতে বসিয়ে থালায় লুচি, তরকারি, পিঠে, পুলি সাজিয়ে দিলেন। হাতপাখা নিয়ে ওদের বাতাস করছিলেন।
(পাঁচ)
আচমকা 'কই রে তোজো, গাবলু?' বলতে বলতে বাইরে থেকে ঢোকেন ক্রিস্টিনা। হাতে লাঠি। বয়সের ভারে ঝুঁকে গেছেন। লম্বা, ফরসা, টিকোলো নাক, ধারালো দৃষ্টি। তোজো, দাদাভাই চমকে উঠল। উনি কী করে ওদের নাম জানলেন? বারান্দায় উঠে ঘরে মুখ বাড়িয়ে হাসিমুখে বললেন, জানতাম, তোরা দুটিতে আসবি। আমাকেও নিস না চিড়িয়াখানায়।
তোজো বিস্ময় চাপতে না পেরে তাঁকে বলেই বসল, আমাদের নাম জানলে কী করে? চিড়িয়াখানার কথাই বা কে বলল? তিনি হেসে ফেললেন, তোরা খালি চোখে দেখতে পাস না, বাতাসে এমন কত অসংখ্য পোকা-মাকড়, পতঙ্গ আছে, জানিস? ওরাই তো গুনগুনিয়ে তোদের নাম বলল! ওরা ছাড়াও আমার আরও সঙ্গী আছে। তোদের দেখাব। চল না আমার বাড়ি।
(ছয়)
ক্রিস্টিনার বাবা ব্রিটিশ, মা বাঙালি। একাই থাকেন। পিসিমার প্রতিবেশী। এলাকার লোকজন আড়ালে নানা আলোচনা করে তাঁকে নিয়ে। এর কারণ, তিনি বড় একটা পাড়ায় মেশেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় পোকা-মাকড়, ফুল-পাখী নিয়েই থাকেন। গুঞ্জন আছে, রাতে নাকি তাঁর বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ছায়ামূর্তি ঘোরাফেরা করে। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে বিদঘুটে শব্দ করে। একজন কাজের লোক বাজার-হাট, বাড়ির সব কাজ সামলায়। তাছাড়া, বাড়িতে পড়শীদেরও ঢুকতে দেন না তিনি। যা প্রয়োজন, বাড়ির দরজায় মিটিয়েই তাঁদের ফেরত্ পাঠিয়ে দেন। আড়ালে তাঁকে ক্ষ্যাপা বুড়ি বলে ডাকে পাড়ার ছেলে-ছোকরারা।
পিসিমা একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন, 'আইজ থাক না, আরেকদিন যাইবো না হয়!' কিন্তু তাঁর আপত্তি টিকল না, তোজোদের শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে নিয়েই ছাড়লেন ক্রিস্টিনা। পেল্লাই বাড়ি। অনেক জায়গায় দেওয়ালে ফাটল। গাছের শিকড়বাকড় বেরিয়েছে। বিশাল বিশাল ঘর। হা হয়ে গেল ওরা। কতগুলো ঘর তো বন্ধই পড়ে আছে। ক্রিস্টিনার বসার ঘরটা বইয়ে ঠাসা, দেওয়াল, বিছানা, টেবিলজুড়ে শুধু বই আর বই। রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন, মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলার ছবি দেওয়ালে। নিউটন, আইনস্টাইন, ডারউইনের ছবিও ঝুলছে। গবেষণা কক্ষে অ্যাকোরিয়ামে নানা কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়। টেস্ট টিউব। বার্নার। একটা ঘরে আবার নানা দেশের পতাকা, আদিম জনজাতিদের মুখোশ, অস্ত্রশস্ত্র। ওদের মধ্যে নাকি বেশ কয়েকটা বছর কাটিয়েছিলেন। ওগুলো সব উপহার পাওয়া।
(সাত)
তোজোরা ঘুরে ঘুরে সব দেখছিল। সঙ্গে ক্রিস্টিনার কাজের লোক। নাম টম। তার হাঁটাচলা, তাকানো যেন ঠিক মানুষের মতো নয়। কণ্ঠস্বরটাও কেমন। বহু দূর থেকে ভেসে আসছে যেন। তোজোদের নজরে এল, একটা ঘর থেকে সুড়ঙ্গের রাস্তা নেমে গিয়েছে। সেদিকে পা বাড়াচ্ছিল, কিন্তু টম হিমশীতল চাহনিতে নিষেধ করল। তোজোর একটু খটকা লাগল। একটা ঘরে নানা চেহারার পুতুল। স্থির। তোজো ওদের মধ্যে ঘুরছিল। আচমকা যেন বেঁটে ভল্লুকটা পিছন থেকে তার জামা ধরে টান মারল! তোজো স্পষ্ট দেখল, নীল চোখো বিড়ালটা হাই তুলল। এও সম্ভব!
ক্রিস্টিনা জোর করে ওদের আখের রস দিলেন। 'আমার ভাই লেন্ডল থাকে মরিশাসে। ওখানে প্রচুর আখ ফলে। কদিন আগেই তো ঘুরে গেল,' বললেন ক্রিস্টিনা। তোজো মণীষীদের ছবি দেখায় মগ্ন ছিল। সম্বিত ফিরল ক্রিস্টিনার কথায়, 'তোরা প্রথম এলি আমার বাড়িতে। বল কী গিফট চাই?' তোজোর ইচ্ছে, অভিনব এমন কিছু নেবে যা অন্য কারও কাছে নেই। দাদাভাইয়ের বিশেষ কিছু চাই না। তোজোর মনের কথা জেনে ক্রিস্টিনা বেল বাজিয়ে তাঁর কাজের লোকটাকে ডেকে বললেন, 'ডেভিড আর রংবাজকে নিয়ে আয় তো!'
(আট)
তোজো, দাদাভাই চমকে উঠল। ডেভিড নামে যাকে টম নিয়ে এসেছে, সে অবিকল তারই মতো দেখতে। কে টম আর কে ডেভিড, বোঝাই দুষ্কর। আর টেবিলের ওপর রাখা কাচের বাক্সে একটা ফড়িং।
ক্রিস্টিনা বললেন, টম আর ডেভিডের মধ্যে একজন মানুষ, অন্যজন যন্ত্র-মানুষ। বল দেখি, কে কোনটা? ঠিক হলে একটা গিফট পাবি। ধন্দে পড়ে গেল ওরা। ক্রিস্টিনা বললেন, তোরা ভাব। ততক্ষণে আমি ফড়িংটাকে একটু খেতে দিই। ক্রিস্টিনা উঠে গিয়ে বাক্সের দরজাটা খুলে একটা শিশি থেকে ড্রপারে বেশ খানিকটা মধু নিয়ে ঢেলে দিলেন একটা ছোট বাটিতে। সেখান থেকে ফড়িংটা মধু খেতে শুরু করল। মধুর খুব মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল ঘরে।
আচমকা টম, ডেভিড দুজনেই ঝাঁপিয়ে পড়ল শিশিটার ওপর। ধস্তাধস্তির মধ্যে টম এমনভাবে ডেভিডের গলা টিপে ধরল যে, তার চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। 'উঃ পারছি না, ছাড়, ছাড়!' বলে উঠল ডেভিড। কোনওক্রমে টমের ফাঁস থেকে নিজেকে মুক্ত করে হাঁফাতে লাগল ডেভিড। টমের কোনও ভাবান্তর নেই। তোজো নিশ্চিত, ডেভিড মানুষ, টমই যন্ত্র-মানুষ। বাঃ একেবারে ঠিক বলেছিস, বললেন ক্রিস্টিনা। এবার বল, টম না রংবাজ, কাকে চাস?
টমকে নিতে চাইল না ওরা। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর কী করে বসে কে জানে! তখন সামলাবে কে? রংবাজকেই নিল।
নয়)
রংবাজের শরীরে বিচিত্র রঙের আলপনা। রামধনুকেও সে হার মানায় রঙের জেল্লায়। ক্রিস্টিনা বললেন, বাতাসে যখন রংবাজ উড়ে বেড়াবে, দেখবি ওর ডানায় সূর্যের আলো পড়ে কেমন রঙের বিস্ফোরণ হবে। রংবাজ যেমন তেমন পতঙ্গ নয়, ওর অদ্ভূত ক্ষমতা আছে। ও রং ঝরাতে পারে পিচকিরির মতো, ধোঁয়া ছাড়তে পারে, সূঁচের মতো তীক্ষ্ম শুঁড়ের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে। ওর আরেকটা ক্ষমতা হল, জন্তুজানোয়ার, মানুষের বুকের ওপর বসে তাদের মনের কথা টের পায়, রেকর্ডও করতে পারে, ছবি তুলতে পারে। ওর চোখে তাকাবি। যা যা রেকর্ড করেছে, সব দেখতে, শুনতেও পাবি। তবে ওকে কিন্তু বাক্সে আটকে রাখবি না। উড়তে দিবি, ও ঠিক সময় মতো ফিরে আসবে।
তোজোর কিন্তু জানা হল না, রংবাজ সত্যিকারের ফড়িং না প্রযুক্তির সৃষ্টি? নাকি দুয়ের মিশেল? ক্রিস্টিনাও কি এই ধুলোমাটির পৃথিবীর কেউ না কোনও অজানা দুনিয়ার কেউ?
(দশ)
এর মধ্যেই তোজোকে কে বা কারা একটা হুমকি-চিঠি দিয়েছে। কাঁপা, কাঁপা হাতে বাংলায় লেখা চিঠির মর্মার্থ, বাবুকে ভুলে যাও। ওকে আর দেখতে পাবে না। ওকে রোবট বানানো হবে! আর এমন দিন আসছে যখন গোটা দুনিয়া শাসন করবে রোবটরা। তোজো চোখ বুজে কল্পনা করল, রাস্তায় রাস্তায় রোবটরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই কি এমন ভয়ঙ্কর দিন আসছে?
(এগারো)
তোজোর অনুমান, বাবু অন্তর্ধান, গল্ফক্লাব মাঠের সেই রাতের ঘটনা, হুমকি-চিঠির মধ্যে কোনও যোগ আছে। রংবাজ-কে নিয়েই বাবু-অন্তর্ধান রহস্য ভেদে নামবে সে। ভুলো থাকবে। ওরা গলফ ক্লাব মাঠের সিকিউরিটি এজেন্সির কর্তাকে ধরল পাড়ার কমলদাদুর সোর্সে। তিনি পূজারী ব্রাহ্মণ। গল্ফক্লাবের বিভিন্ন পুজো পার্বনের প্রধান পুরোহিত তিনি। 'কোথাকার একটা বাচ্চা ছেলে, কী না কী বলছে!'- তোজোর আর্জি শুনে তো প্রথমে পাত্তাই দিতে চাননি সিকিউরিটি হেড। কমলদাদুর পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হলেন। বললেন, ঠিক আছে। ছেলেটা বলছে যখন, তখন পাঁচিলের ধারে জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে দেখা যাক! সামনের রোববার দুপুর। আমি থাকব। আমার লোকজন মাটি খুঁড়বে।
(বারো)
মাটি খুঁড়তে গিয়েই বাধা। কোদাল, শাবল হাতে সিকিউরিটির লোকজনকে দেখেই শিমূল গাছটা থেকে যে নেমে এল, তাকে দেখে তো তাজ্জব তোজোরা। একটা অদ্ভূত দর্শন আধা মানুষ, আধা-যন্ত্র। মাথাটা চকচকে, মুখভর্তি দাড়ি, চোখদুটো যেন নীল পাথর। জ্বলছে, নিভছে। রংবাজ-কে দেখেই তার রাগ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। নীল পাথুরে চোখদুটো ক্রমশঃ রাগে লাল। মুখ থেকে আগুনের গোলা বেরচ্ছে। তোজো ছায়া দেশ থেকে পাওয়া কালো চশমা দিয়ে দেখল, তার বুকে দুটো পেসমেকার বসানো। ফুসফুস আছে। শিরা, ধমনীতে রক্তও বইছে। মস্তিষ্কের খানিকটা অসংখ্য নার্ভে ভর্তি, আবার অজস্র তার, চুম্বক, খোপওয়ালা বাক্সও আছে। হাত-পা তামা বা দস্তাজাতীয় পদার্থে তৈরি মনে হল। এমন অদ্ভূত খাপছাড়া সৃষ্টি কার! প্রবল আক্রোশে সে তোজোদের রাস্তা আটকে দাঁড়াল। ভয়ে সিকিউরিটির লোকজন পিছতে শুরু করল। তখনই পাল্টা আঘাত রংবাজের। প্রথমে সে ভস ভস করে ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করল। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে অদ্ভূত জীবটা আক্রোশে ফোঁস ফোঁস করতেই রংবাজ পিচকিরির মতো রং ছুঁড়ছে। লাল, কালো, নীল, বেগুনি, সবুজ রং। সেইসঙ্গে পিছন থেকে জীবটার গায়ে ছুঁচলো শুঁড় দিয়ে একের পর এক আঘাত। খোঁচা খেতে খেতে আর্তনাদ করে জীবটা মাটিতে আছড়ে পড়ে ভেঙে চুরচুর হয়ে গেল। আর কী চমক! ধোঁয়া কেটে যেতেই তার কোনও চিহ্নই নেই। তবে ঘটনাস্থলে পড়ে আছে একটা রিমোট। আচমকা তোজোর নজরে পড়ল শিমূল গাছের গায়ে চক দিয়ে লেখা একটা সাংকেতিক সংখ্যা! Chri9900111777. এটা কি তবে কোনও গোপন আস্তানার দরজা খোলার সূত্র? কপাল ঠুকে তোজো গাছের নীচে দাঁড়িয়ে রিমোটে সংখ্যাগুলি বসিয়ে সবুজ বোতাম টিপতেই সামনের মাটি সরতে শুরু করল।
১৩
তোজোরা ঝুঁকে পড়ে দেখল, একটা সিঁড়িপথ মাটির গভীরে নেমে গিয়েছে। দুজন বন্দুকধারীকে নিয়ে সিকিউরিটি হেড তোজো, ভুলোর সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে নামলেন। বেশ কয়েকটা ধাপ নামার পর ওরা দেখল ভিতরে রীতিমতো ঘরবাড়ি আছে! সবই অবশ্য কাচের ঘর। কিন্তু কারা থাকে এখানে? কোনও ঘর থেকে আবার টিভির শব্দ আসছে। সন্তর্পনে পা টিপে টিপে ওরা দু-তিনটে ঘর ছাড়িয়ে ভিতরে ঢুকতেই চমকে গেল। দেখল, একটা ঘরে দেওয়ালজুড়ে টিভি। তাতে পাঠান চলছে। সামনে বাধ্য ছেলের মতো দেওয়ালে হেলান দিয়ে বিছানায় বাবু! পাশে টেবিলে গ্লাসে ফলের রস। তারিয়ে তারিয়ে ছবিটা উপভোগ করছে। ওকে ঘিরে বেশ কয়েকটা রোবট। সেগুলোর আবার ডানা আছে। তাহলে নিশ্চয়ই উড়তে পারে। বাবু শাহরুখ-দীপিকার উদ্দাম নাচে মশগুল। কিন্তু নাচ শেষ হতেই কেমন উসখুশ শুরু হল। হাতে স্যামসাঙের মোবাইল নিয়ে স্ক্রল করছে। আনমনা। তার মধ্যেই হঠাত্ দুটো রোবট ওর দুহাত চেপে ধরে পটপট করে দুটো ইঞ্জেকশন পুশ করে দিল। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার মধ্যে তোজোরা লুকিয়ে সব দেখতে থাকল। একটু বাদেই বাবু ঝিমোতে ঝিমোতে ঘুমে ঢলে পড়ল। তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রোবটগুলো বাবুর মাথায়, বুকে, হাতে পায়ে নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে একটা বড় মেশিন চালু করে আলো-টিভি নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাবু নিঃসাড়। ওরা কি বাবুকে রোবট করে তুলছে?
১৪
তোজোরা সবটা মোবাইলে ভিডিও করে রাখল। আরও কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করল ওরা কিছু হয় কিনা দেখার জন্য। বাবু যখন পাঠান দেখছিল, তখনই রংবাজ তার বুকের ওপর বসে তার মনের কথা রেকর্ড করেছে। বাবু বা রোবটগুলি কিচ্ছু টের পায়নি। পাছে কেউ ওদের উপস্থিতি টের পায়, সেজন্য প্রায় আধ ঘণ্টা মোবাইল সুইচ অফ রেখে অপেক্ষায় রইল তোজোরা। রংবাজ মাঝেমধ্যেই কোথায় উধাও হয়ে যাচ্ছে, আসছে। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু রেকর্ড করছে। হঠাত্ ঘরের একটা আলো জ্বলে উঠল। আবছা আলোয় দেখা গেল, একটা আলখাল্লা জাতীয় পোশাক পরা কেউ এসে বাবুর মাথায় লাগানো মেশিন খুলে আরেকটা মেশিন পরিয়ে দিল। শরীরের বাকি সব যন্ত্র, তার খুলে কোনও মলম লাগাল অনেকক্ষণ ধরে। এরপর একেবারে রোবটের মতো দেখতে চকচকে পোশাক পরিয়ে দিল বাবুকে। আলখাল্লাধারীকে চেনা গেল না। বাবু যথারীতি অচেতন। কিছুক্ষণ পর এক রোবট এসে বাবুর মুখে সিরাপজাতীয় ওষুধ ঢেলে দিল। সিরাপ পেটে যেতেই বাবু উঠে বসল। বিস্মিত। মনে হয়, যেন কোনও অচেনা দেশে এসেছে। বিছানা থেকে মেঝেতে পা ফেলে হাঁটছে রোবটের মতো। হাত দুটোও নাচাচ্ছে রোবটের কায়দায়। একটা আয়নায় নিজেকে দেখে কাঁধ ঝাঁকাল। সঙ্গে সঙ্গে সেই রোবটগুলো এসে ওকে ধরে জোর করে বিছানায় বসিয়ে চেন দিয়ে বেঁধে রেখে কোথায় চলে গেল।
১৫
তোজোরা ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল, এখানে বসে না থাকে বরং রোবটগুলিকে ফলো করে দেখা যাক। ওদের ডেরাটা কোথায়? কাচের ঘরগুলি পেরিয়ে ওরা একটা এবড়োখেবড়ো রাস্তায় এসে পড়ল। মাটির নীচে কারা বানাল রাস্তা? অনেকগুলো সাইকেল পড়ে আছে রাস্তার পাশে। একটায় চড়ে বসল তোজো। আরেকটায় সেই সিকিউরিটি হেড। সাইকেলের প্যাডেলে পা দিতেই আপনা থেকে চলতে শুরু করল। সাঁ সাঁ করে ঝড়ের বেগে সাইকেল ছুটছে। কিন্তু রোবটগুলো কোথায় সরে পড়ল? নাকি ওদের চেয়েও বেশি গতিতে উড়ে ডেরায় ঢুকে পড়েছে? এরপর সাইকেল যেখানে এসে থামল, জায়গাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে তোজোর। আরে এ তো ক্রিস্টিনার বাড়ির সেই সুড়ঙ্গের মুখ! তবে কি রোবটগুলো ক্রিস্টিনার বাহিনী? ওই বাড়িতে সেঁধিয়ে আছে? বাবুকে লোপাট করার পিছনে হাত আছে ক্রিস্টিনার? দরজায় কান পেতে তোজোরা শুনতে পেল, রোবটগুলো আউ, আউ, হাউ, যাউ, পাউ- অবোধ্য ভাষায় কী সব বলছে। কাকে বলছে?
১৬
রাতে বাড়ি ফিরে রংবাজ-এর চোখ দিয়ে বাবুর মনের কথা শুনল তোজোরা। বাবু পাঠান দেখতে দেখতে ভাবছে, 'কী যেন নাম বাচ্চাটার, অহনা না গহনা, ভ্যালেন্টাইনস ডে চলে গেল, ও তো এল না! বলেছিল, দেবে একটা তাজা গোলাপ, এল না, এল না, হলই না আলাপ। আর তো থাকব না জানোয়ার, বদলে হব রোবট, আশা পূরণ হল না আর, হলাম খুব শকড!'
ও, তাহলে এই বাবুর মনের দুঃখ, যার ক্ষতে প্রলেপ দিতেই 'ঝুমে জো পাঠান!'
তোজোরা ঠিক করল, তাহলে অহনাকে গোলাপ হাতে বাবুর কাছে পাঠালে হয়তো বাবুর কষ্ট দূর হবে।
তার আগে সে পুলিশ মামাকে সব জানাল। ঠিক করল, বাবুকে পুরোপুরি রোবটগুলোর হাত থেকে মুক্ত করেই চিড়িয়াখানায় খবর দেবে।
১৭
পরদিন অহনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে হাতে বেশ কয়েকটা গোলাপ দিয়ে তোজোরা আবার সেই মাটির তলার রোবট-পাড়ায় ঢুকল। কাচের ঘরের দিকে তাকাতেই দেখল, বাবু ছটফট করছে। রোবটগুলোর মধ্যেও তুমুল ব্যস্ততা। সম্ভবতঃ বাবুকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল মেলেনি। রোবট বানাতে গিয়ে উল্টো ফল হয়েছে। বাবুকে বাগে আনা যাচ্ছে না। সে হিংস্র হয়ে হাত পা ছুঁড়ছে। কয়েকটা রোবটকে ঘুঁসি মেরে মাটিতে ফেলে দিল বাবু। কয়েকটা রোবট দরজা খুলে ছুটে পালাতে গিয়ে পড়ল রংবাজের সামনে। রংবাজ শুঁড় বের করে ওদের তাড়া করে ঘরে আটকে রাখল। ভয়ে বিভ্রান্ত, দিশাহারা রোবটগুলো শান্ত। আর ঠিক সেই সময়ই অহনা গোলাপ নিয়ে দাঁড়াল বাবুর সামনে। কোথায় সেই উগ্রচণ্ডা রূপ, সে কী মুগ্ধ অভিব্যক্তি বাবুর। গন্ধে ম ম করছে ঘরটা। বাবু হাত বুলিয়ে দিল অহনার মাথায়। গন্ধ পেয়ে রোবটগুলোও মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে এল। হাতে গোলাপের পাপড়ি নিয়ে এর ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মাথা নাড়তে লাগল।
বাবুকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল তোজোরা। গোলাপে মাতাল রোবটরা বাধা দিতেই যেন ভুলে গেল। বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির। খবর পেয়ে চিড়িয়াখানার লোকরা বিরাট খাঁচা নিয়ে এসেছে। এলাকার লোকজন বাবু দর্শনে হামলে পড়েছে। টিভি চ্যানেলগুলিও আছে।
১৮
কিন্তু রংবাজ কোথায়? তোজোরা তন্নতন্ন করে খুঁজল। কিন্তু তার দেখা নেই। অশান্ত মনে ভুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরল তোজো। বাড়ি ফিরে দেখল, বাবা-মায়ের মুখ গম্ভীর। নীরবতা ভেঙে মা জানালেন, পিসেমশাইয়ের মহামায়াতলার পিসিমা ফোন করেছিলেন, ক্রিস্টিনা দত্ত আজ দুপুরে মারা গিয়েছেন। গুলি করেছেন নিজেকেই। তাঁর বুকের ওপর পড়ে আছে একটা ফড়িং। প্রাণহীন। তোজো বুঝল, রংবাজ আর ক্রিস্টিনা একই হৃদয়ের সুতোয় বাঁধা। দুজনেই একসঙ্গে চলে গেল।
ক্রিস্টিনার দেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে গেল পুলিশ। কিন্তু সেখানেও চমক। লাশ কাটা ঘরে কয়েক ঘণ্টা পর গিয়ে দেখা যায়, ক্রিস্টিনা নেই, বদলে পড়ে আছে একটা গুলিবিদ্ধ কাচের পুতুল!
১৯
মৃত রংবাজের অপলক চোখে একটা মেসেজ দেখতে পেল তোজো---- 'এবার হল না, আবার ফিরব। বাবুকে একদিন তো বাগে পাবই, ওকে রোবট বানাবই। রংবাজটা বেইমানি করল এভাবে! নিজেও মরব, ওকেও বেঁচে থাকতে দেব না। আমার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে ও।'
আর রংবাজের মনের কথাও পড়ল তোজো। '--নিজের আয়ু দিয়ে আমায় তৈরি করেছেন। কিন্তু ক্রিস্টিনার মানুষকে রোবট শাসনে বশ করার বাসনা মানতে পারি না। মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কেন? মানুষ মানুষ থাকলে ক্ষতি কী?'
২০
তোজো হতভম্ব। তাহলে এত কিছুর পিছনে ক্রিস্টিনাই! তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর পায়নি সে। পুলিশি তদন্ত চলল কিছুদিন। পরে পুলিশ মামা তোজোকে এমন সব তথ্য দিলেন যা তোজোর শিরদাঁড়ায় হিমেল স্রোত বইয়ে দিল। পুলিশবাহিনী গলফ ক্লাব মাঠের নীচের কাচের ঘর, মহামায়াতলার পোড়ো বাড়ির সব ঘর তল্লাশি করে দেখেছে, সেখানে একটা বন্ধ ঘরে অসংখ্য রোবটের ভাঙাচোরা টুকরো, জারে তরল রাসায়নিকে ভেজানো মানবমস্তিষ্ক, পেসমেকার, ব্যাটারি পাওয়া গিয়েছে। কিছু কিছু রোবটে মানবমস্তিষ্ক লাগানো। প্রচুর ইঞ্জেকশন মিলেছে যা দিয়ে মানুষের স্মৃতিলোপ করা যায়। আর মিলেছে মাটি কাটার যন্ত্রও।
ক্রিস্টিনার একটা ডায়েরিও উদ্ধার হয়। তার একটা পৃষ্ঠায় কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, পৃথিবীতে অনেকদিন কাটালাম মানবীর রূপ নিয়ে। মানুষকে রোবট বানানোর প্ল্যান নিয়ে এসেছিলাম। এমন দিন দেখতে চাই, পৃথিবীতে মানুষের ওপর শাসন চলবে রোবটের। আর আমার পদানত থাকবে রোবটকূল। জানি না, স্বপ্ন কবে সফল হবে।
এসব শুনে পিসিমার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, রামো, রামো! কার পাশে অ্যাদ্দিন ছিলাম? রবিবারই সত্যনারায়ণ পূজা দিয়া বাড়িটা শুদ্ধ করুম!
All rights reserved. No part of this publication may be reproduced, distributed, or transmitted in any form or by any means, including photocopying, recording, or other electronic or mechanical methods, without the prior written permission of the author and publisher.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন