আমার নোবেল সমগ্র কোরিয়ার সাহিত্য জগতের জন‌্য সুখবর : হান কাং

ছেলের সঙ্গে বসে চা খাব। আজ রাতে নীরবেই আমি নোবেল পাওয়াটা উদ্‌যাপন করব। পুরস্কারের খবরে বলেন লেখিকা হান কাং।

আমার নোবেল সমগ্র কোরিয় সাহিত্যের জন‌্য সুখবর : হান কাং

সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং। ১০ অক্টোবর রাজধানী সিওলে নিজের বাড়িতে ছেলের সঙ্গে ডিনারের কিছু পরেই তিনি নোবেল প্রাপ্তির খবরটি জানতে পারেন। নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়। নোবেল পাওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার। নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে হান কাংয়ের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়েছে। নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন জেনি রাইডেন। এখানে সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশের অনুবাদ তুলে দেওয়া হল।

হান কাং : হ্যালো?

জেনি রাইডেন : হ্যালো, আপনি কি হান কাং?

হান কাং : হ্যাঁ।

জেনি: আমি জেনি রাইডেন। নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে আমি আপনাকে ফোন করেছি।

হান কাং : হুম, আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে।

জেনি : আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমারও বেশ ভালো লাগছে। সবকিছুর আগে আপনাকে অভিনন্দন।

হান কাং : ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ।

জেনি : এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী?

হান কাং : আমি বেশ অবাক হয়েছি। সম্মানিত বোধ করছি।

জেনি : পুরস্কারের খবরটি কীভাবে জানলেন?

হান কাং : কেউ একজন ফোন করে আমাকে খবরটি দিলেন। খবরটি আমাকে অবশ্য বেশ অবাক করেছিল। আমার ছেলের সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করার পরপরই আমি খবরটি পাই। তখন সবে রাত আটটা বাজে। বুঝতেই পারছেন, আমার জন্য এটা একটি বেশ শান্ত-স্নিগ্ধ সন্ধ্যা ছিল। আমি সত্যিই বেশ অবাক হয়েছিলাম।

জেনি : আপনি কি এখন সিওলে নিজের বাড়িতেই আছেন?

হান কাং : হ্যাঁ। আমি সিওলে নিজের বাড়িতেই আছি।

জেনি : আজ সারা দিনে আপনার কেমন কাটলো?

হান কাং : আজকে? আজ আমি কোনও কাজ করিনি। টুকটাক পড়াশোনা করেছি। হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। বলতে গেলে একটা সাদামাটা দিন কেটেছে।

জেনি : আপনি বললেন আপনি আপনার ছেলের সঙ্গে আছেন। আপনার নোবেল পাওয়া নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন?

হান কাং : আমার ছেলেও বেশ অবাক হয়েছিল। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কথা বলার বেশি সময় পাইনি। কারণ আমরা দুজনেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আর ওই মুহূর্তে ওটাই ছিল সবকিছু।

জেনি : আপনার কাছে সাহিত্যে নোবেল পাওয়াটা কী অর্থ বহন করে?

হান কাং : আচ্ছা, আমি বেশ সম্মানিত বোধ করছি। আমি আপনার সমর্থন ও এই পুরস্কারের সমর্থনের আন্তরিকভাবে প্রশংসা করছি।

জেনি : দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাহিত্যে আপনিই প্রথম নোবেল পেলেন। এই অনুভূতিটি কেমন?

হান কাং : আমি বই পড়তে পড়তে বেড়ে উঠেছি। শৈশব থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস। কোরিয় ভাষা ও অনুবাদ, সব ধরনের বই পড়তে পড়তেই আমি বড় হয়েছি। তাই আমি বলতে চাই, কোরিয়ার সাহিত্যকে সঙ্গী করেই আমি বেড়ে উঠেছি। কোরিয়ার সাহিত্যের সঙ্গে আমি বেশ ঘনিষ্ঠতা বোধ করি। তাই আমার পুরস্কার পাওয়া এটি কোরিয় সাহিত্যের পাঠক, আমার বন্ধু ও লেখকদের জন্য একটি চমৎকার খবর বলে আমার মনে হচ্ছে।

জেনি : আপনি একটি সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছেন। কোন কোন লেখকে আপনার প্রেরণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস?

হান কাং : শৈশব থেকেই আমার কাছে লেখকদের ব্যাপারে একটি সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তাঁরা জীবনের অর্থ অনুসন্ধান করেছেন। কখনও কখনও তাঁরা হার মেনেছেন। কখনও কখনও তাঁরা অবিচল থেকেছেন। তাঁদের যাবতীয় প্রচেষ্টা ও শক্তি আমার প্রেরণা। তাই প্রেরণা হিসেবে কয়েকজনের নাম বলাটা আমার কাছে বেশ কঠিন। এটা আমার কাছে সত্যিই দারুণ কঠিন।

জেনি : আমি কোথাও পড়েছিলাম সুইডেনের লেখক অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন আপনার অন্যতম প্রেরণার উৎস?

হান কাং : হ্যাঁ। শৈশবে তাঁর ‘লায়নহার্ট ব্রাদার্স’ পড়তে ভালো লেগেছিল। বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু এর অর্থ এই না যে, তিনিই একমাত্র লেখক যিনি আমাকে শৈশবে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। লায়নহার্ট ব্রাদার্স পড়ার সময় মানুষ, জীবন ও মৃত্যু নিয়ে বইটির সঙ্গে আমার বিভিন্ন প্রশ্নের মিল খুঁজে পেয়েছিলাম।

জেনি : যে সব ব্যক্তি খুব অল্প সময় আপনার কাজ সম্পর্কে জেনেছেন, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? তাঁরা আপনার কোন বই দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়?

হান কাং : আমার বইয়ের কথা বলছেন? আমি মনে করি প্রত্যেক লেখক তাঁর সর্বশেষ বইকে বেশি পছন্দ করেন। নতুন পাঠকেরা চাইলে আমার সর্বশেষ বই ‘উই ডু নট পার্ট’ দিয়ে শুরু করতে পারেন। ইংরেজি অনুবাদে বইটার আরও দুটি শিরোনাম হতে পারে ‘আই ডু নট বিড ফেয়ারওয়েল’ বা ‘ইম্পসিবল গুডবাইস’। আমার মনে হয় এটা দিয়ে শুরু করাটা তাঁদের জন্য ভালো। আমার এর আগের বই ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’ সরাসরি ‘উই ডু নট পার্ট’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর পর তাঁরা ‘দ্য হোয়াইট’ বুক পড়তে পারেন। এটা আমার আত্মজীবনীমূলক বই। পাঠকেরা ‘দ্য ভেজেটারিয়ান’ দিয়েও শুরু করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় ‘উই ডু নট পার্ট’ দিয়ে শুরু করাটা ভালো।

জেনি : বিদেশি পাঠকদের কাছে সম্ভবত দ্য ভেজেটারিয়ান সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই উপন্যাস নিয়ে কিছু বলুন।

হান কাং : এটি আমি তিন বছর ধরে লিখেছিলাম। কিছু কারণে ওই তিন বছর আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমাকে প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং সেই নারী চরিত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা অন্যান্য চরিত্রগুলোর চিত্রকল্প খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। বর্ণনায় থাকা গাছপালা ও সূর্যকিরণের চিত্রকল্পের জন্যও আমাকে হাঁটুভাঙা পরিশ্রম করতে হয়েছিল।

জেনি : শেষ প্রশ্ন, নোবেল পুরস্কার পাওয়াটি আপনি কীভাবে উদ্‌যাপন করবেন? কিছু ভেবেছেন কি?

হান কাং : আপনার সঙ্গে কথা শেষ করে আমি চা পান করার কথা ভাবছি। আমি মদ পান করি না। আমি আমার ছেলের সঙ্গে বসে চা খাব। আজ রাতে নীরবেই আমি নোবেল পাওয়াটা উদ্‌যাপন করব।

জেনি : বেশ চমৎকার। আপনাকে আবারও অসংখ্য অভিনন্দন। অনেক ধন্যবাদ।

হান কাং : ধন্যবাদ।

হান কাংয়ের ‘উই ডোন্ট নট পার্ট’ উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। উপন্যাসটির প্রকাশক পেঙ্গুইন বুকস।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন