প্রথাগত প্রকাশনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্ব-প্রকাশনা বৃদ্ধি পেয়েছে।এমনকি টেলর সুইফটের মতো লেখিকাও এই উদীয়মান মাধ্যমটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
শর্টভিডিও অ্যাপ টিকটকের সহযোগী জনপ্রিয় বুক রিডিং অ্যাপ বুকটক (BookTok)। সেটিতে যাঁরা মাঝেমধ্যে আসেন, তাঁদের কাছেও অতি পরিচিত নাম অ্যানা হুয়াং। ফোর্বস-এর জুলাই মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালেই তাঁর বইগুলির পনেরো লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। যা তাঁকে বুকটকের চতুর্থ জনপ্রিয় লেখকের শিরোপা দিয়েছে। অ্যানা লেখা শুরু করেন ২০২০ সালে। নিজের উদ্যোগে স্ব-প্রকাশনা দিয়েই শুরু। পরের বছর প্রকাশিত হয় Twisted Love। তারপর দীর্ঘ বিরতি। বর্তমানে বুকটকে অ্যানার ফলোয়ার সংখ্যা ১২.৫ মিলিয়ন।
তবে তাঁর এই সাফল্য রাতারাতি মোটেই আসেনি। একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অ্যানা জানান, তিনি সিন্ডারেলার গল্পটি পাঠকের সামনে হাজির করার আগে আড়ালে বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আর এইসব কিছু করতে গিয়ে তিনি ক্রমে স্ব-প্রকাশনার প্রতি উৎসাহী হয়েছেন। তাঁর মতে, সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণের জন্য স্ব-প্রকাশনার বিকল্প নেই। অনেক অখ্যাত, অপিরিচিত লেখকরা যেমনটা করে থাকেন, অ্যানা সে পথে হেঁটে নামি প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি করে কেরিয়ার শুরুর স্বপ্ন দেখেননি।
শুধু নভেল লেখাই নয়, অ্যানা প্রকাশনার সমস্ত দিক আয়ত্ত করার জন্যও অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছেন। তাঁর কথায়, “এটা অত্যন্ত জরুরি, কারণ স্ব-প্রকাশনা একটা ছোটো ব্যবসা চালানোর মতে। পুরো ব্যবসাটি কীভাবে কাজ করে, বিশেষ করে বিপণন শেখাটিকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম।
আসলে, প্রথাগত প্রকাশনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্ব-প্রকাশনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি টেলর সুইফটের মতো লেখিকাও এই উদীয়মান মাধ্যমটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এখানে লেখকদের সাহিত্যজগতে প্রবেশে সাহিত্য এজেন্ট বা প্রকাশকের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না, যা অনেক লেখকের ক্ষেত্রেই স্বপ্ন সফলে বাধা হতে পারে। লেখকরা বিশ্বের সমস্ত দেশের পাঠকের কাছে সহজে পৌঁছতে পারেন এবং অনেক বেশি রয়্যালটি তাঁরা রাখতে পারেন।
স্ব-প্রকাশনার (ইংরেজি বা ইউরোপিয়ান ভাষা) লেখকদের উপার্জন সবসময় একই থাকে না। কিন্তু, কিছু লেখকের দাবি তাঁরা শুধুমাত্র অ্যামাজন-এ স্ব-প্রকাশনাক মাধ্যমে প্রতিমাসে ১০ হাজার ডলারের বেশি আয় করেন। অ্যানাও অ্যামাজন ই-বুক হিসাবে তাঁর বইগুলি প্রকাশ করতে শুরু করেন। পরে কিছু হার্ডকপিও প্রকাশ করেছিলেন। তবে তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তাঁর স্ব-প্রকাশনা বইগুলি এখন আর হার্ডকপি পাওয়া যায় না। বর্তমানে তাঁর বই পরম্পরাগত প্রকাশনার মাধ্যমেও প্রকাশিত হচ্ছে।
কোনও সাফল্যই সহজে আসে না। তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। যাঁরা স্ব-প্রকাশনায় সদ্য প্রবেশ করেছেন বা আগ্রহী তাঁদের কয়েকটি দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অ্যানা বড় প্রকাশকদের মতোই স্বাধীন সম্পাদক ও প্রুফ রিডারের সাহায্য নিয়ে থাকেন। আরও একটি বিশেষ বিযয় হল ‘আলফা রিডার’ ও ‘বিটা রিডার’দের সাহায্য নেওয়া। যাঁরা প্রথম লেখাটি পড়ে তাঁকে পলিশ করেন। অ্যানা তাঁর ‘দ্য স্টাইকার’ নভেলটির জন্য ফুটবল ও ব্যালে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা ‘আলফা রিডার’-এর সাহায্য নিয়েছিলেন।
Twisted Love ছিল অ্যানার ব্রেকআউট সিরিজ হলেও তিনি ২০২০ সালে তাঁর ‘ইফ লাভ’ সিরিজে চারটি বই স্ব-প্রকাশ করেছিলেন। অ্যানা ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে একটি কর্পোরেট সংস্থায় চাকরিও করেছেন। তিনি বিপণনটিকে সম্পূর্ণভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিয়ে গিয়েছেন। এর জন্য তিনি তাঁর পেশাদার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে ব্যবহার করেছন। ‘টুইস্টেড লাভ’ নিয়ে কাজ করার সময় অ্যানা লেখায় আরও বেশি মনোসংযোগ করেছেন, তেমনই একটি ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করতে সময় ব্যয় করেছেন। এটি পেশা হিসাবে নেবেন মনস্থ করার পরেই স্ব-প্রকাশনা সংক্রান্ত পডকাস্ট শুনতে শুরু করেন। পড়েছেন বিভিন্ন বইও।
অর্থাৎ, স্ব-প্রকাশনা যেমন প্রথাগত প্রকাশনার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে উঠে আসছে, তেমনই এই মাধ্যমটিতে সাফল্য পেতে হলে লেখকদের পরিশ্রম করতে হবে এবং রাতারাতি সাফল্য আসবে, এমন আশা না করাই উচিত হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন