সাম্প্রতিক কিছু বইয়ে মধ্যবয়সী মহিলাদের যৌন ইচ্ছার পুনঃজাগরণ অন্বেষণের পাশাপাশি, তাঁর আত্ম-বিসর্জন এবং আত্ম-জিজ্ঞাসার টানাপোড়েনটিও চিত্রিত হয়েছে। এখানে এমনই তিনটি বইয়ের আলোচনা করলেন শ্রীদেব
মধ্যজীবনে পৌঁছে একজন নারী কী চান? সুসান মিনোটের সদ্য প্রকাশিত উপন্যাস ‘ডোন্ট বি এ স্ট্রেঞ্জার’-এর শুরুর দৃশ্যটি হয়তো বা সেই প্রশ্নেরই একটা উত্তর খোঁজার চেষ্টা। দৃশ্যটি এরকম– আইভি বাথটাবের উষ্ণজলে অবগাহন করছেন। হয়তো কোনও ভাবনায় ডুবে রয়েছেন। এমন সময় ডোরবেলটা বেজে উঠল। আইভি বাথটাব থেকে উঠে সিক্ত শরীরে একটা টাওয়েল জড়িয়ে নিলেন। তারপর ধীরপায়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এলেন। আগন্তুক, বছর ত্রিশের সুদর্শন এক যুবক। সে আইভির পরিচিত নয়। তবে প্রথম দর্শনেই হ্যান্ডসাম ছেলেটি কিন্তু তার মনে ঝড় তুলেছে। যুবক ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে, ‘আমি একটু তাড়ায় আছি।’ আইভি তাকে থামিয়ে দিয়ে ওষ্ঠ গালে ছুঁইয়ে আলতো চুম্বন এঁকে দেয়। প্রতিচুম্বনে শীতল আইভিকেও সিক্ত করে যুবক।দৃশ্যটি মুহূর্তের জন্য প্যাট্রিস চেরিউ-র ২০০১ সালের ছবি ‘ইনটিমেসি’-র পটভূমি মনে করিয়ে দেয়, যেখানে এক বিবাহ-বিচ্ছিন্ন পুরুষ প্রতি বুধবার এক অপরিচিত মহিলার সঙ্গে উন্মত্ত যৌনতায় মেতে ওঠেন।
আত্ম-বিসর্জন এবং আত্ম-জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে উত্তেজনা, উচ্ছ্বসিত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিণতির আশংকার মধ্যে একজন মধ্যবয়সী নারীর অল্পবয়সী পুরুষের সঙ্গে এমন সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে অজস্র উপন্যাস রয়েছে। এই সারিতেই পড়ে চলতি বছরে প্রকাশিত মিরান্ডা জুলাইয়ের ‘অল ফোরস’। তাছাড়াও, গতবছর প্রকাশিত নোবেলজয়ী সাহিতি্যক অ্যানি আর্নক্সের ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য ইয়ং ম্যান’। প্রকৃতপক্ষে, আর্নক্স সম্ভবত এই ঘরানার পৃষ্ঠপোষক। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁর একাধিক উপন্যাস রয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘সিম্পল প্যাশন’-এ (তানিয়া লেসলির অনুবাদ) কথককে বলতে শোনা যায়, “আমি আমার আবেগকে ব্যাখ্যা করতে চাই না– যাতে মনে হতে পারে যে সেটা ভুল ছিল বা আমার কোনও অসুখ ছিল যাকে আমার ন্যায্যতা দেওয়া দরকার। সে জন্য আমি কেবল বর্ণনা করতে চাই।” গল্পে মহিলা তার অল্পবয়সী প্রেমিক সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, “বুঝতে পারিছি যে আমি শারীরিক আনন্দের দিকেই চলে যাচ্ছি। যেন মস্তিষ্ক, একই চিত্র এবং স্মৃতির বারবার প্রবাহের কাছে উন্মুক্ত, যা চরম যৌন উত্তেজনা পেতে পারে, অন্যদের মতো যৌন অঙ্গে পরিণত হতে পারে।” কিন্তু, যখন ছেলেটি পাশে থাকে, সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে, আসন্ন মুহূর্তটির কথা ভেবে যন্ত্রণা বোধ করে, যখন সে চলে যাবে। নিজেই আশ্চর্য হই। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করি, ‘বর্তমানটা কোথায়?’
‘অল ফোরস’-এ একজন পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী কথকের তার বিবাহিত প্রেমিক ডেভির সঙ্গে দীর্ঘ ফোরপ্লের দৃশ্যগুলি সহজবোধ্য, তবে সেই স্বাভাবিক যৌন বর্ণনায় জুলাই প্রায়শই বেশ মজা করেছেন। যেমন, ডেভির উত্থিত পুরুষাঙ্গের বিবরণ দেওয়ার সময় কথক বলতে থাকেন– ‘অনেক শান্তশিষ্ট মনে করেছিলাম। আমি অবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। আমি নিচু হয়ে সেটাকে চুম্বন করতে চেয়েছিলাম অথবা...। এখানেই জুলাই আর্নক্সের সেই তত্ত্ব ধার করেছেন, বর্ণনা করো, ব্যাখ্যা নয়। উপন্যাসটি একটি ৪৫ বছর বয়সী পেরিমেনোপজাল মহিলাকে নিয়ে, যিনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন এবং প্রথমবার প্রকৃত যৌন অনুভূতির স্বাদ পেয়েছেন।
আর্নক্স ও জুলাইের লেখক স্বত্ত্বা সতন্ত্র। জুলাই অস্বস্তির মধ্যে থেকে উপাদান আরোহন করেন। আর আর্নক্সের চরিত্রটি উদ্ধত, অথচ চরম যৌনপাগল। কিন্তু তারা উভয়ই মস্তিষ্ক এবং শরীর, বুদ্ধি এবং যৌন চাহিদার আনন্দদায়ক সংমিশ্রণকে বিষয় হিসাবে গ্রহণ করে। এর বিপরীতে মিনোট ‘ডোন্ট বি এ স্ট্রেঞ্জার’-এ একটি ভিন্ন মাত্রা বেছে নিয়েছেন। আইভি ব্যাখ্যা করতে চায় তার সঙ্গে যা ঘটছে। টানাপোড়েন রয়েছে। মিনোটের উপন্যাসে যে অনিশ্চয়তা এবং আত্ম-সচেতনতাবোধ ছড়িয়ে রয়েছে তা সম্ভবত মধ্যবয়সে যৌনতা এবং সম্পর্ক অনেক নারীর অভিজ্ঞতাতেই সত্য।
এই দ্বিধাদ্বন্দ্বটি আমারা দেখতে পাই ২০২২ সালে প্রকাশিত জুলিয়া মে জোনাসের ‘ভ্লাদিমির’-এ। যেখানে কথক, পঞ্চাশ পার করা এক ইংরেজির অধ্যাপিকা নিজের অবদমিত প্রবৃত্তিগুলিকে চরিতার্থ করতে একটি চরিত্রের প্রতি চরম নির্মম হয়ে ওঠেন। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রথমবারের মতো আমার জীবনের অনুভূতি হয়েছিল।”...“আমি ঠিক যা চেয়েছিলাম, যা কল্পনা করেছিলাম আর স্বপ্ন দেখেছিলাম,... নিজেকে হিমশীতল কুমারীকন্যার মতো মনে হচ্ছিল।” আসলে জোনাস এখানে এমন একটি বিশ্বকে চিত্রিত করেছেন যেখানে নারীরা নিজেদের শেকল খুলে ফেলার চেষ্টা করেও, বন্ধনে আটতে যান।
‘ভ্লাদিমির’, ‘অল ফোর’ এবং ‘ডোন্ট বি এ স্ট্রেঞ্জার’, –তিনটি উপন্যাসই কোথায় যেন একই সূত্রে গাঁথা। যেখানে একজন মা হিসাবে দায়দায়িত্ব, অন্যদিকে মানসিক ও শারীরিরভাবে কোনও পুরুষকে কামনা, কিন্তু তারমধ্যে সামাজিক অনুশাসন অনুযায়ী পাপবোধ– এইসমস্ত কিছুর টানাপোড়েন। প্রতিটি উপন্যাসে ছত্রে ছত্রে দৃশ্যগুলি এই টানাপোড়েনের উপর নির্মিত। মোটকথা এই নারীরা নিজস্ব একটা পরিসর চান। চান নিভৃত যৌনতা।
যেমন, দেখুন না, ‘অল ফোরস’-এ কথক মহিলা চরিত্রটি নিজের শহরের কাছাকাছি একটি মোটেলে উঠেছেন, তাঁর সন্তান ও স্বামীর থেকে কয়েকদিন আড়ালে কাটাতে। তিনি ঘরটি নতুন করে সাজানোর জন্য একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ করেছেন। সেখানে, তিনি ডেভির সঙ্গে উদ্দাম যৌন মিলনের আয়োজন করেন। তেমনই সারাহ মাঙ্গুসোর সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘লায়ার্স’-এ কথক একজন অসুখী স্ত্রী এবং তাঁর একটি ছোট সন্তানও আছে। তিনি ক্ষুধার্ত, সেই সময়টির জন্য, যা তিনি প্রত্যাশিত বলে ভাবতে দ্বিধা করেন। তিনি নিজের জন্য একটা ঘর চান, যার মালিক তিনি। সেখানে তিনি একা থাকবেন। কল্পনা করেন, হঠাৎ সেখানে কেউ এসে দাঁড়াবে। ডিশ অ্যান্টেনা বসানোর মিস্ত্রি, কিংবা প্রতিবেশীর মেশ বাড়িতে থাকা কোনও যুবক, যাদের সে প্রলুব্ধ করবে।
এই লেখকদের নায়িকারা সন্তান মানুষ করা, স্বামীকে সামলানো, ঘর-সংসার সামলানোর কাজে জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়ে এসে স্নায়বিকভাবে ক্লান্ত। তঁারা যেন কোলাজেন, ইস্ট্রোজেন, সব ভালো অনভূতি ক্রমে হারিয়ে ফেলছেন।
একজন মেনোপজাল নারীর সামাজিক ও পারিবারিক ভূমিকা কি শুধু নাতি-নাতনিদের প্রতিপালনের জন্য? এর বাইরে তাঁর নিজস্ব চাওয়া-পাওয়াগুলি নিয়ে কেউ ভাবেও না, তিনি নিজেও যেন ভাবনার মধ্যে আনতে পারেন না। অস্বস্তিটা থেকে যায় শীতের শুকনো পাতার মতো। কিন্তু, আমাদের আলোচনায় থাকা উপন্যাসগুলি মধ্যবয়সী নারীদের যৌন ইচ্ছার অন্বেষণ করার সঙ্গে সেই অস্বস্তিকেও প্রতিফলিত করে।
মিনোটের গল্পটিও ক্রমে সেই দিকেই মোড় নিয়েছে। কিন্তু, তাঁর সেটি একটি কামোদ্দীপক দৃশ্য দিয়ে শুরু। আইভি একজন মধ্যবয়স্ক লেখক, বিবাহবিচ্ছিন্ন, এবং একনিষ্ঠ মা। ওয়েস্ট ভিলেজের অ্যাপার্টমেন্টে একাই থাকছেন। ক’টা দিনের জন্য সংসার থেকে দূরে নিভৃত জীবন যাপন। আগন্তুক, আনসেল ফ্লেমিং একজন মিউজিসিয়ান। কোনও পূর্বপরিচয় ছাড়াই ব্লাইন্ড ডেটিংয়ে এসেছে। যেটা জানা যাচ্ছে, আনসেল একটি মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাত বছর জেলে কাটিয়ে সদ্য মুক্তি পেয়েছে। একটা লোভ তাড়িতে হয়ে সে কাজটা করে ফেলেছিল। লম্বা চুল উঁচুতে তুলে বাঁধা। কিন্তু তা সত্বেও একটা পুরুষালি ব্যক্তিত্ব আছে। অানসেল আর আইভি শেষপর্যন্ত দুর্দান্ত যৌনতায় মেতে থাকে। আর কথক হয়ে আইভি নিবিড়ভাবে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। ওরা গভীর চুম্বন করে। আনসেল আইভির হাত নিয়ে ট্রাউজারের নীচে তার জেগে ওঠা পুরুষাঙ্গর উপর রাখে। বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে হারিয়ে যেতে থাকে আইভি। ডোন্ট কেয়ার ভাব। ক্রমে অসমবয়সী দুটো শরীর মিশে যেতে থাকে। তারমধ্যেই আইভির চেতনা বলে: অতীত কী ছিল বা ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে সত্যিই কি ভাবার কিছু আছে?
আত্ম-বিসর্জন এবং আত্ম-জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে উত্তেজনা, উচ্ছ্বসিত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিণতির আশংকার মধ্যে একজন মধ্যবয়সী নারীর অল্পবয়সী পুরুষের সঙ্গে এমন সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে অজস্র উপন্যাস রয়েছে। এই সারিতেই পড়ে চলতি বছরে প্রকাশিত মিরান্ডা জুলাইয়ের ‘অল ফোরস’। তাছাড়াও, গতবছর প্রকাশিত নোবেলজয়ী সাহিতি্যক অ্যানি আর্নক্সের ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য ইয়ং ম্যান’। প্রকৃতপক্ষে, আর্নক্স সম্ভবত এই ঘরানার পৃষ্ঠপোষক। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁর একাধিক উপন্যাস রয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘সিম্পল প্যাশন’-এ (তানিয়া লেসলির অনুবাদ) কথককে বলতে শোনা যায়, “আমি আমার আবেগকে ব্যাখ্যা করতে চাই না– যাতে মনে হতে পারে যে সেটা ভুল ছিল বা আমার কোনও অসুখ ছিল যাকে আমার ন্যায্যতা দেওয়া দরকার। সে জন্য আমি কেবল বর্ণনা করতে চাই।” গল্পে মহিলা তার অল্পবয়সী প্রেমিক সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, “বুঝতে পারিছি যে আমি শারীরিক আনন্দের দিকেই চলে যাচ্ছি। যেন মস্তিষ্ক, একই চিত্র এবং স্মৃতির বারবার প্রবাহের কাছে উন্মুক্ত, যা চরম যৌন উত্তেজনা পেতে পারে, অন্যদের মতো যৌন অঙ্গে পরিণত হতে পারে।” কিন্তু, যখন ছেলেটি পাশে থাকে, সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে, আসন্ন মুহূর্তটির কথা ভেবে যন্ত্রণা বোধ করে, যখন সে চলে যাবে। নিজেই আশ্চর্য হই। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করি, ‘বর্তমানটা কোথায়?’
‘অল ফোরস’-এ একজন পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী কথকের তার বিবাহিত প্রেমিক ডেভির সঙ্গে দীর্ঘ ফোরপ্লের দৃশ্যগুলি সহজবোধ্য, তবে সেই স্বাভাবিক যৌন বর্ণনায় জুলাই প্রায়শই বেশ মজা করেছেন। যেমন, ডেভির উত্থিত পুরুষাঙ্গের বিবরণ দেওয়ার সময় কথক বলতে থাকেন– ‘অনেক শান্তশিষ্ট মনে করেছিলাম। আমি অবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। আমি নিচু হয়ে সেটাকে চুম্বন করতে চেয়েছিলাম অথবা...। এখানেই জুলাই আর্নক্সের সেই তত্ত্ব ধার করেছেন, বর্ণনা করো, ব্যাখ্যা নয়। উপন্যাসটি একটি ৪৫ বছর বয়সী পেরিমেনোপজাল মহিলাকে নিয়ে, যিনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন এবং প্রথমবার প্রকৃত যৌন অনুভূতির স্বাদ পেয়েছেন।
আর্নক্স ও জুলাইের লেখক স্বত্ত্বা সতন্ত্র। জুলাই অস্বস্তির মধ্যে থেকে উপাদান আরোহন করেন। আর আর্নক্সের চরিত্রটি উদ্ধত, অথচ চরম যৌনপাগল। কিন্তু তারা উভয়ই মস্তিষ্ক এবং শরীর, বুদ্ধি এবং যৌন চাহিদার আনন্দদায়ক সংমিশ্রণকে বিষয় হিসাবে গ্রহণ করে। এর বিপরীতে মিনোট ‘ডোন্ট বি এ স্ট্রেঞ্জার’-এ একটি ভিন্ন মাত্রা বেছে নিয়েছেন। আইভি ব্যাখ্যা করতে চায় তার সঙ্গে যা ঘটছে। টানাপোড়েন রয়েছে। মিনোটের উপন্যাসে যে অনিশ্চয়তা এবং আত্ম-সচেতনতাবোধ ছড়িয়ে রয়েছে তা সম্ভবত মধ্যবয়সে যৌনতা এবং সম্পর্ক অনেক নারীর অভিজ্ঞতাতেই সত্য।
এই দ্বিধাদ্বন্দ্বটি আমারা দেখতে পাই ২০২২ সালে প্রকাশিত জুলিয়া মে জোনাসের ‘ভ্লাদিমির’-এ। যেখানে কথক, পঞ্চাশ পার করা এক ইংরেজির অধ্যাপিকা নিজের অবদমিত প্রবৃত্তিগুলিকে চরিতার্থ করতে একটি চরিত্রের প্রতি চরম নির্মম হয়ে ওঠেন। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রথমবারের মতো আমার জীবনের অনুভূতি হয়েছিল।”...“আমি ঠিক যা চেয়েছিলাম, যা কল্পনা করেছিলাম আর স্বপ্ন দেখেছিলাম,... নিজেকে হিমশীতল কুমারীকন্যার মতো মনে হচ্ছিল।” আসলে জোনাস এখানে এমন একটি বিশ্বকে চিত্রিত করেছেন যেখানে নারীরা নিজেদের শেকল খুলে ফেলার চেষ্টা করেও, বন্ধনে আটতে যান।
‘ভ্লাদিমির’, ‘অল ফোর’ এবং ‘ডোন্ট বি এ স্ট্রেঞ্জার’, –তিনটি উপন্যাসই কোথায় যেন একই সূত্রে গাঁথা। যেখানে একজন মা হিসাবে দায়দায়িত্ব, অন্যদিকে মানসিক ও শারীরিরভাবে কোনও পুরুষকে কামনা, কিন্তু তারমধ্যে সামাজিক অনুশাসন অনুযায়ী পাপবোধ– এইসমস্ত কিছুর টানাপোড়েন। প্রতিটি উপন্যাসে ছত্রে ছত্রে দৃশ্যগুলি এই টানাপোড়েনের উপর নির্মিত। মোটকথা এই নারীরা নিজস্ব একটা পরিসর চান। চান নিভৃত যৌনতা।
যেমন, দেখুন না, ‘অল ফোরস’-এ কথক মহিলা চরিত্রটি নিজের শহরের কাছাকাছি একটি মোটেলে উঠেছেন, তাঁর সন্তান ও স্বামীর থেকে কয়েকদিন আড়ালে কাটাতে। তিনি ঘরটি নতুন করে সাজানোর জন্য একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ করেছেন। সেখানে, তিনি ডেভির সঙ্গে উদ্দাম যৌন মিলনের আয়োজন করেন। তেমনই সারাহ মাঙ্গুসোর সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘লায়ার্স’-এ কথক একজন অসুখী স্ত্রী এবং তাঁর একটি ছোট সন্তানও আছে। তিনি ক্ষুধার্ত, সেই সময়টির জন্য, যা তিনি প্রত্যাশিত বলে ভাবতে দ্বিধা করেন। তিনি নিজের জন্য একটা ঘর চান, যার মালিক তিনি। সেখানে তিনি একা থাকবেন। কল্পনা করেন, হঠাৎ সেখানে কেউ এসে দাঁড়াবে। ডিশ অ্যান্টেনা বসানোর মিস্ত্রি, কিংবা প্রতিবেশীর মেশ বাড়িতে থাকা কোনও যুবক, যাদের সে প্রলুব্ধ করবে।
এই লেখকদের নায়িকারা সন্তান মানুষ করা, স্বামীকে সামলানো, ঘর-সংসার সামলানোর কাজে জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়ে এসে স্নায়বিকভাবে ক্লান্ত। তঁারা যেন কোলাজেন, ইস্ট্রোজেন, সব ভালো অনভূতি ক্রমে হারিয়ে ফেলছেন।
একজন মেনোপজাল নারীর সামাজিক ও পারিবারিক ভূমিকা কি শুধু নাতি-নাতনিদের প্রতিপালনের জন্য? এর বাইরে তাঁর নিজস্ব চাওয়া-পাওয়াগুলি নিয়ে কেউ ভাবেও না, তিনি নিজেও যেন ভাবনার মধ্যে আনতে পারেন না। অস্বস্তিটা থেকে যায় শীতের শুকনো পাতার মতো। কিন্তু, আমাদের আলোচনায় থাকা উপন্যাসগুলি মধ্যবয়সী নারীদের যৌন ইচ্ছার অন্বেষণ করার সঙ্গে সেই অস্বস্তিকেও প্রতিফলিত করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন