যে বইয়ের জন‌্য বুকার পুরস্কার পেলেন সামান্থা হার্ভে

সবাইকে পেছনে ফেলে বুকার ২০২৪ জিতেলেন ব্রিটিশ লেখক হার্ভে। ২০১৯ সালের পর তিনি প্রথম বুকারজয়ী নারী। এ বছরের শর্টলিস্টে থাকা পাঁচজন লেখকের সবাই অবশ্য মহিলা।

যে বইয়ের জন‌্য বুকার পুরস্কার পেলেন সামান্থা হার্ভে

ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে ২০২৪ সালের বুকার পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর ‘অরবিটাল’ বইটির জন্য সামান্থার এই সম্মানপ্রাপ্তি। নভেলটিতে এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে ছয় মহাকাশচারীর কাটানো একটি দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বইটি। সেখানে দুই পুরুষ ও চার নারী মহাকাশচারী উপস্থিত । কোভিড-১৯ অতিমারীর আবহে লকডাউনের সময় ‘অরবিটাল’ বইটির বেশিরভাগটা লিখেছেন হার্ভে। বুকার প্রাইজেক বিচারক প‌্যানেলের প্রধান এডমুন্ড ডে ওয়ালের ভাষায়, এটি ‘ক্ষতবিক্ষত পৃথিবীর’ গল্প। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে ছয় নভোচারীর পৃথিবী প্রদক্ষিণ করা, সীমানা এবং টাইম জোনের সংবেদনশীল অঞ্চলাজুড়ে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা নিয়ে লেখা এ কাহিনীতে প্রত্যেকেই বিষয়বস্তু, আবার কেউই বিষয়বস্তু নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অরবিটাল একটি বিস্ময়কর উপন্যাস। এ বই বিশ্বকে আমাদের সামনে অদ্ভুত ও নতুন ধাঁচে তুলে ধরেছে।’

পুরস্কার পাওয়ার পর হার্ভে বলেছেন, ‘যেসব মানুষ পৃথিবীর পক্ষে সরব থাকেন, অন্য মানুষের মর্যাদা, অন্য প্রাণের পক্ষে কথা বলেন এবং যেসব মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরব হন ও কাজ করেন, তাঁদের সবার জন্য পুরস্কারের ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ উৎসর্গ করছি।’ প্রসঙ্গত. ‘অরবিটাল’ বইটি ১৩৬ পৃষ্ঠার, এটি বুকারজয়ী দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ততম বই। এই বইটি মহাকাশের পটভূমিতে লেখা প্রথম কোনও বই, যেটি বুকার পুরস্কার জিতেছে।

চলতি বছর বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় সামান্থা হার্ভে ছাড়া আরও চারজনের নাম ছিল। এর মধ্যে মার্কিন লেখক র‍্যাচেল কুশনার (‘‘ক্রিয়েশন লেক’’ বইয়ের জন্য) এবং কানাডীয় লেখক অ্যান মাইকেলসও (‘‘হেল্ড’’ বইয়ের জন্য) ছিলেন।

কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের সময় ঘরে আটকে পড়েছিল পৃথিবী। মানুষ দীর্ঘ সময় বাসায় বসে ভেবেছে, কীভাবে সময় কাটানো যায়। অনলাইনে যোগাযোগের নানা উপায় বেরিয়েছে এ সময়। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছে মানুষ, তবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সামাজিক সবকিছু থেকে।

ঠিক এ সময় ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেন। কোভিডের কারণে ঘরে আটকে পড়া কাউকে নিয়ে নয়, মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়া ছয় নভোচারীর গল্প লিখলেন তিনি। মহাকাশ স্টেশন প্রতিনিয়ত ঘুরছে পৃথিবীকে ঘিরে। ফলে এ স্টেশনে থাকা নভোচারীরা প্রতিদিন ১৬টি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেন। এই নভোচারীরা বাধ্য হয়ে পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁদের সামনে থাকে নীল পৃথিবী। এই পৃথিবী একদিকে সুন্দর, আরেকদিকে ভঙ্গুর। জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর সময় ঘনিয়ে আসছে।

হার্ভে বলেছেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখা একটা শিশুর আয়নায় তাকানোর মতো। যে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করে আয়নায় থাকা মানুষটা সে নিজেই।’ বইটি লেখার জন্য হার্ভেকে রীতিমতো গবেষণা করতে হয়েছে। তিনি নিজে মহাকাশে না গিয়েও সেখান থেকে দেখা পৃথিবী, নভোচরদের দিনরাত্রির অভিজ্ঞতা, তাঁদের মানসিক অবস্থা কল্পনায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এজন‌্য বইটি লেখার সময় মহাকাশচারীদের লেখা বই পড়েতেন হার্ভে। নিয়মিত দেখতেন মহাকাশ স্টেশনের লাইভ ক্যামেরা। এভাবেই অরবিটাল উপন্যাসটির ‘প্লট’ তৈরি হয়েছে।

এই উপন্যাসের সঙ্গে পৃথিবীর মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। তবে লেখক নিজে বলছেন, উপন্যাসটি ঠিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নয়, তবে পৃথিবীকে দেখলে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সত্যটুকু বোঝা যায়।

অনিদ্রা নিয়ে আগে চারটি উপন্যাস ও স্মৃতিকথা লিখেছেন হার্ভে। ২০২০ সালের পর তিনিই প্রথম ব্রিটিশ লেখক, যিনি বুকার জিতলেন। এ পুরস্কার যে কোনও দেশের ইংরেজি ভাষার লেখকদের জন্য উন্মুক্ত। ১৯৬৯ সালে প্রথম বুকার পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছিলেন আইরিশ লেখক পল লিঞ্চ ‘প্রফেট সং’-এর জন্য। পুরস্কার পেয়ে অভিভূত হার্ভে জানিয়েছেন, এ পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি প্রথমে ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। পাশাপাশি একটি নতুন বাইকও কিনতে চান। আর বাকি টাকা দিয়ে ঘুরতে যাবেন জাপানে।

পুরস্কারের জন্য জমা পড়েছিল ১৫৬টি উপন্যাস। এর মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে বেছে নেওয়া হয়েছিল ব্রিটেন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের পাঁচ চূড়ান্ত প্রতিযোগীকে। সবাইকে পেছনে ফেলে বুকার ২০২৪ জিতেলেন ব্রিটিশ লেখক হার্ভে। ২০১৯ সালের পর তিনি প্রথম বুকারজয়ী নারী। এ বছরের শর্টলিস্টে থাকা পাঁচজন লেখকের সবাই অবশ্য মহিলা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন