’৬৩-র হলিউডে The Revolt of the Slave Girls কি আজকের #MeToo-র অগ্রদূত?

১৯৬৩ সাল। Cleopatra ছবির শুটিং চলছে। হলিউড সিনেমায় একটি ইতিহাসের জন্ম হচ্ছে। কিন্তু, সেই সিনেমা ঘিরেই সূচনা হল এক নতুন আন্দোলন। হলিউডের মেয়েরা গড়ল আরেক ইতিহাস।

’৬৩-র হলিউডে The Revolt of the Slave Girls কি আজকের #MeToo-র অগ্রদূত?
‘ক্লিওপেট্রা’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরকে ঘিরে দাসীরা।

১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউডের এপিক মুভি Cleopatra বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি আলোচিত অধ্যায় হয়ে আছে। জোসেফ এল. মাঙ্কিয়েভিচ পরিচালিত ও ক্লিওপেট্রার এলিজাবেথ টেলর অভিনীত ছবিটি তার বাজেট, রাজনৈতিক রোমাঞ্চ এবং দৃষ্টিনন্দন পোশাকের জন্য আজও পরিচিত। কিন্তু এই ছবির পিছনে লুকিয়ে আছে একটি বিস্মৃত ও প্রায় অপ্রকাশিত সত্য– The Revolt of the Slave Girls বা ক্রীতদাসী বিদ্রোহ।


ক্লিওপট্রা ছবিটি বিখ্যাত হয়েছিল তার অপূর্ব প্রোডাকশন ভ্যালু, ব্যয়বহুল সেট ও পোশাক, এবং কিছু খোলামেলা দৃশ্যের জন্যও। এই ছবিতে কয়েকশো এক্সট্রা গার্লকে ব‌্যবহার হয়েছিল সম্পূর্ণ নগ্ন বা খোলামেলা পোশাকে। বিশেষ করে রাজপ্রাসাদের দৃশ্য, উৎসব, ও ক্লিওপেট্রার প্রবেশ দৃশ্যে। ছবিটির কলেবর বাস্তব করার জন‌্য তাদের ব‌্যবহার হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোমান বা মিশরীয় রাজ দরবার, উৎসব বা সৈন্যবাহিনীর মার্চের দৃশ্যে। পোশাক ডিজাইনার Irene Sharaff এবং কস্টিউম টিম চেয়েছিলেন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রোমান এবং মিশরীয় নগ্নতাকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ছবিতে তুলে ধরতে। তবে, কিছু দৃশ্যে যে নগ্নতা বা খোলামেলা উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা প্রডাকশনের অংশ হিসেবেই পরিকল্পিতভাবে, মোটেই অশ্লীলতার উদ্দেশ্যে নয়। এটি ‘সিনেমাটিক নগ্নতা’র ধারণায় একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়, যদিও আজকের মানদণ্ডে তা তুলনামূলকভাবে অনেক মৃদু ছিল।

এক্সট্রা অভিনেত্রীদের নাম ছবির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, তারা ছিলেন ‘আননোন’ বা নামহীন পারফর্মার। অনেকেই ছিলেন স্থানীয় স্ট্রাগলিং অভিনেত্রী বা মডেল, যারা অতিরিক্ত আয়ের জন্য এই ধরনের ছবিতে কাজ করতেন। তাছাড়া, সেই সময় সময়ের হলিউডে এক্সট্রাদের তথ্য সংরক্ষণ করা হতো না, বিশেষ করে নগ্ন বা পার্শ্ব নগ্ন দৃশ্যে অভিনেতাদের। সে কারণে ছবির পার্শ্ব নগ্ন চরিত্রে অভিনয় করা এক্সট্রা অভিনেত্রীদের আলাদা করে বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। কিন্তু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁরা।


শুটিংয়ের সময় ইতালীয় পুরুষ এক্সট্রাদের অনেকে এই মহিলা অভিনেত্রীদের প্রতি অসভ্য এবং অবমাননাকর আচরণ করতে শুরু করেন। কারও দিকে অশালীন মন্তব্য, কারও দিকে কুরুচিকর দৃষ্টি, এমনকি কয়েকটি ক্ষেত্রে দেহ স্পর্শ করার অভিযোগও উঠে। এই অবমাননাকর পরিস্থিতি সহ্য না করে একদল মহিলা এক্সট্রা অভিনেত্রী একতত্রিত হয়ে শুটিং বন্ধ করে দেন। এই অভিনেত্রীর সোজা ঘোষণা দেন, তাঁরা নিরাপত্তা না পেলে বা নিজেদের নিরাপদ মনে না করলে আর শুটিংয়ে অংশ নেবেন না। এই প্রতিবাদ এতটাই জোরালো ছিল যে তা একপ্রকার ‘ক্রীতদাসী বিদ্রোহ’ নামেই পরিচিতি পায় হলিউডে। এই এক্সট্রা অভিনেত্রীরা ক্লিওপেট্রার দাসীর চরিত্রে ছিলেন। সে কারণেই আন্দোলনটি এই নাম পেয়েছিল।

এই অভিনেত্রীদের দাবি ছিল– পুরুষ সহ-অভিনেতাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণে স্টুডিও হস্তক্ষেপ করুক, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক, খোলামেলা পোশাকে অভিনয় করার আগে তাঁদের সম্মতি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক। প্রথম দিকটায় স্টুডিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি হালকাভাবে নিলেও, পরে যখন সংবাদমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য অভিনেত্রীদের সমর্থন জুটে যায়, তখন MGM এবং পরিচালকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন। মহিলা অভিনেত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা রক্ষীবাহিনী নিযুক্ত করা হয়, চিত্রগ্রহণের সময় মহিলা কো-অর্ডিনেটর রাখা হয়, যাতে অসভ্য আচরণ বন্ধ করা যায় এবং নতুন নীতিমালা চালু করা হয় যেখানে অভিনেত্রীদের সম্মতির ভিত্তিতেই পোশাকের ধরন নির্ধারণ করা হতো।

’৬৩-র হলিউডে The Revolt of the Slave Girls কি আজকের #MeToo-র অগ্রদূত? one
শুটিংয়ের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন এক্সট্রা অভিনেত্রীরা

The Revolt of the Slave Girls শুধুমাত্র ক্লিওপেট্রা ছবির ইতিহাস নয়, বরং এটি হলিউডে নারী অভিনেত্রীদের অধিকার ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতার এক বড় উদাহরণ। যদিও মিডিয়া তখন বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা বুঝি—এই বিদ্রোহ ছিল একপ্রকার #MeToo-এর অগ্রদূত।

চলচ্চিত্র শুধু পর্দার শিল্প নয়, এর পিছনে থাকা মানুষদের জীবন, সংগ্রাম ও সাহসও এরই অঙ্গ। ১৯৬৩ সালের ক্লিওপেট্রার ক্রীতদাসী বিদ্রোহ সেই অজানা কাহিনিগুলির একটি, যা প্রমাণ করে, অভিনেত্রীদের গ্ল্যামারের আড়ালে রয়েছে লড়াই, প্রতিবাদ এবং নিজেদের সম্মান রক্ষার এক জোরালো কণ্ঠস্বর।





Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন