সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, এই শো-এর নির্মাতারা জানতেনই না যে রডনির অতীতে রয়েছে আট বছরের এক শিশুকে হত্যাচেষ্টার মতো অপরাধ!
১৯৭৮ সালের এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় আমেরিকার বিখ্যাত টেলিভিশন গেম শো The Dating Game-এর মঞ্চে যখন সঞ্চালক জিম ল্যাং উচ্ছ্বসিত গলায় ঘোষণা করলেন, Here’s our Bachelor Number One – a successful photographer!, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে উক্ত ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর শয়তানের মুখ।
সেই ব্যাচেলর নাম্বার ওয়ান ছিলেন রডনি আলকালা (Rodney Alcala)। সুন্দর চেহারা, মিষ্টি হাসি, রসবোধে ভরপুর – বাইরের জগৎ তাঁকে এক আদর্শ রোমান্টিক পুরুষ হিসেবে দেখছিল, কিন্তু তাঁর ভিতরে বাস করছিল এক ঠাণ্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার। একের পর এক নিষ্পাপ মহিলার হত্যাকারী এই মানুষটি ছিল প্রকৃতির এক ভয়ঙ্কর তামাশা।
রডনি যখন The Dating Game-এ প্রতিযোগী হিসেবে এলেন, তখন তিনি ইতিমধ্যেই অন্তত পাঁচজন মহিলাকে হত্যা করেছেন। তালিকায় রয়েছে ১২ বছর বয়সী রবিন স্যামসো-র নাম, যাকে ১৯৭৯ সালে ব্যালে ক্লাসে যাওয়ার সময় অপহরণ করে খুন করা হয়। তার মৃতদেহ পাওয়া যায় সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতের জঙ্গলে, প্রায় দুই সপ্তাহ পরে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, এই শো-এর নির্মাতারা জানতেনই না যে রডনির অতীতে রয়েছে আট বছরের এক শিশুকে হত্যাচেষ্টার মতো অপরাধ! তৎকালীন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা সম্ভব হয়নি। তার সুদর্শন চেহারা এবং ‘রহস্যময়’ ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে নির্মাতারা ভাবলেন, এটাই নাকি শো-এর জন্য ‘পারফেক্ট কন্টেন্ট’।
রডনির সঙ্গে ওই পর্বে আরও দুই প্রতিযোগী ছিলেন। তাদের একজন জেড মিলস। তিনি পরে বলেন, ও ছিল অসাধারণ রকমের ‘ক্রিপি’। গ্রীন রুমে বসে ও আমাকে বলে, ‘I always get my girl.’ আমি তখনই কিছু একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছিলাম।
অবশেষে, ব্যাচেলোরেট শেরিল ব্র্যাডশো আলকালাকেই বেছে নেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, শো-এর পরদিনই শেরিল ফোন করে জানান, “এই লোকটা খুব অদ্ভুত। তাঁর কাছ থেকে একটা অস্বস্তিকর ভাইব আসছে। আমি তাঁর সঙ্গে ডেটে যেতে পারব না।”
১৯৮০ সালে রবিন স্যামসো হত্যার দায়ে আলকালা গ্রেপ্তার হন। পুলিশ একটি গুদাম থেকে উদ্ধার করে শত শত নারীর ছবি। যাদের অনেকেই নগ্ন, কেউ কেউ কম্প্রোমাইজিং অবস্থায়। তার মধ্যে অনেকের পরিচয় আজও অজানা। সেই গুদাম থেকে মেলে একজোড়া সোনালী কানের দুল – যেগুলি রবিনের পরনে ছিল, যেদিন সে নিখোঁজ হয়।
এরপর একে একে খুঁজে পাওয়া যায় আলকালার অপর শিকারদের পরিচয়:– জিল বারকম্ব (১৯ বছর) – মুখ বিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় রাস্তায়, জর্জিয়া উইক্সটেড (২৭ বছর) – নিজের ঘরে নৃশংসভাবে হত্যা, শার্লট ল্যাম্ব (৩১ বছর) – ধর্ষণের পর গলায় দড়ি পেঁচানো ছিল, জিল পারেন্টো (২১ বছর) – ঘরের বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই সমস্ত হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায় আলকালার স্টোরেজে থাকা ডিএনএ নমুনা বিশ্লেষণ থেকে। তার নিজের হাতে তোলা ফটোগ্রাফ আর ‘ট্রফি’ হিসেবে রাখা জিনিসপত্রই শেষ পর্যন্ত তাকে ফাঁসিয়ে দেয়।
আলকালাকে একাধিকবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়– ১৯৮০, ১৯৮৬, এবং ২০১০ সালে। শেষবার তিনি নিজেই আদালতে নিজেকে ডিফেন্ড করেন। অবিশ্বাস্যভাবে, ২০১০ সালে কোর্টরুমে সে তার নিজের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে, নিজের কথায় নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়। এক অভিনব মনস্তাত্ত্বিক খেলা যেন! তিনি ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্কে করনেলিয়া ক্রিলি এবং এলেন হোভারকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। ২০১৬ সালে ক্রিস্টিন থরন্টন হত্যার অভিযোগ আনা হলেও, তার বয়স ও শারীরিক অবস্থার কারণে ওয়াইওমিং সরকার তাকে ট্রায়ালের জন্য আর নিয়ে যায়নি।
বর্তমানে, রডনি আলকালা ক্যালিফোর্নিয়ার করকরান স্টেট কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে বন্দি ছিলেন। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত থাকায় তার ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখা হয়। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ক্যালিফর্নিয়ার এক হাসপাতালে মারা যান রডনি আলকালা।
![]() |
ব্যাচেলর নাম্বার ওয়ান ছিলেন রডনি আলকালা। ফাইল ছবি। |
১৯৭৮ সালের এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় আমেরিকার বিখ্যাত টেলিভিশন গেম শো The Dating Game-এর মঞ্চে যখন সঞ্চালক জিম ল্যাং উচ্ছ্বসিত গলায় ঘোষণা করলেন, Here’s our Bachelor Number One – a successful photographer!, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে উক্ত ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর শয়তানের মুখ।
সেই ব্যাচেলর নাম্বার ওয়ান ছিলেন রডনি আলকালা (Rodney Alcala)। সুন্দর চেহারা, মিষ্টি হাসি, রসবোধে ভরপুর – বাইরের জগৎ তাঁকে এক আদর্শ রোমান্টিক পুরুষ হিসেবে দেখছিল, কিন্তু তাঁর ভিতরে বাস করছিল এক ঠাণ্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার। একের পর এক নিষ্পাপ মহিলার হত্যাকারী এই মানুষটি ছিল প্রকৃতির এক ভয়ঙ্কর তামাশা।
রডনি যখন The Dating Game-এ প্রতিযোগী হিসেবে এলেন, তখন তিনি ইতিমধ্যেই অন্তত পাঁচজন মহিলাকে হত্যা করেছেন। তালিকায় রয়েছে ১২ বছর বয়সী রবিন স্যামসো-র নাম, যাকে ১৯৭৯ সালে ব্যালে ক্লাসে যাওয়ার সময় অপহরণ করে খুন করা হয়। তার মৃতদেহ পাওয়া যায় সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতের জঙ্গলে, প্রায় দুই সপ্তাহ পরে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, এই শো-এর নির্মাতারা জানতেনই না যে রডনির অতীতে রয়েছে আট বছরের এক শিশুকে হত্যাচেষ্টার মতো অপরাধ! তৎকালীন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা সম্ভব হয়নি। তার সুদর্শন চেহারা এবং ‘রহস্যময়’ ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে নির্মাতারা ভাবলেন, এটাই নাকি শো-এর জন্য ‘পারফেক্ট কন্টেন্ট’।
রডনির সঙ্গে ওই পর্বে আরও দুই প্রতিযোগী ছিলেন। তাদের একজন জেড মিলস। তিনি পরে বলেন, ও ছিল অসাধারণ রকমের ‘ক্রিপি’। গ্রীন রুমে বসে ও আমাকে বলে, ‘I always get my girl.’ আমি তখনই কিছু একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছিলাম।
অবশেষে, ব্যাচেলোরেট শেরিল ব্র্যাডশো আলকালাকেই বেছে নেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, শো-এর পরদিনই শেরিল ফোন করে জানান, “এই লোকটা খুব অদ্ভুত। তাঁর কাছ থেকে একটা অস্বস্তিকর ভাইব আসছে। আমি তাঁর সঙ্গে ডেটে যেতে পারব না।”
১৯৮০ সালে রবিন স্যামসো হত্যার দায়ে আলকালা গ্রেপ্তার হন। পুলিশ একটি গুদাম থেকে উদ্ধার করে শত শত নারীর ছবি। যাদের অনেকেই নগ্ন, কেউ কেউ কম্প্রোমাইজিং অবস্থায়। তার মধ্যে অনেকের পরিচয় আজও অজানা। সেই গুদাম থেকে মেলে একজোড়া সোনালী কানের দুল – যেগুলি রবিনের পরনে ছিল, যেদিন সে নিখোঁজ হয়।
এরপর একে একে খুঁজে পাওয়া যায় আলকালার অপর শিকারদের পরিচয়:– জিল বারকম্ব (১৯ বছর) – মুখ বিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় রাস্তায়, জর্জিয়া উইক্সটেড (২৭ বছর) – নিজের ঘরে নৃশংসভাবে হত্যা, শার্লট ল্যাম্ব (৩১ বছর) – ধর্ষণের পর গলায় দড়ি পেঁচানো ছিল, জিল পারেন্টো (২১ বছর) – ঘরের বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই সমস্ত হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায় আলকালার স্টোরেজে থাকা ডিএনএ নমুনা বিশ্লেষণ থেকে। তার নিজের হাতে তোলা ফটোগ্রাফ আর ‘ট্রফি’ হিসেবে রাখা জিনিসপত্রই শেষ পর্যন্ত তাকে ফাঁসিয়ে দেয়।
আলকালাকে একাধিকবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়– ১৯৮০, ১৯৮৬, এবং ২০১০ সালে। শেষবার তিনি নিজেই আদালতে নিজেকে ডিফেন্ড করেন। অবিশ্বাস্যভাবে, ২০১০ সালে কোর্টরুমে সে তার নিজের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে, নিজের কথায় নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়। এক অভিনব মনস্তাত্ত্বিক খেলা যেন! তিনি ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্কে করনেলিয়া ক্রিলি এবং এলেন হোভারকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। ২০১৬ সালে ক্রিস্টিন থরন্টন হত্যার অভিযোগ আনা হলেও, তার বয়স ও শারীরিক অবস্থার কারণে ওয়াইওমিং সরকার তাকে ট্রায়ালের জন্য আর নিয়ে যায়নি।
বর্তমানে, রডনি আলকালা ক্যালিফোর্নিয়ার করকরান স্টেট কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে বন্দি ছিলেন। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত থাকায় তার ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখা হয়। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ক্যালিফর্নিয়ার এক হাসপাতালে মারা যান রডনি আলকালা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন