প্রথম ইউরোপীয় আইসক্রিমের সন্ধান মেলে ১৬০০-এর দশকের ইতালিতে। ফ্লোরেন্স, নেপলস এবং প্যারিসের অভিজাতদের ভোজসভায় বরফ মেশানো মিষ্টি পানীয় পরিবেশিত হতো।
আইসক্রিমের আদি ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের যেতে হবে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে, মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। সেখানকার অভিজাতরা গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা থাকতে বরফের গুদাম বানাতো। আবার প্রাচীন গ্রীসে বরফ দিয়ে ঠান্ডা করা পানীয় বিক্রি হতো রাস্তাঘাটে। রোমান সম্রাট নিরো (৩৭–৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) পাহাড়ি বরফে মধু মিশিয়ে পান করতেন—এক প্রকার প্রাচীন শারবতই বলা চলে।
চিনের ট্যাং রাজবংশের আমলে (৭ম থেকে ১০ম শতক) একধরনের মিষ্টি পানীয় তৈরি হতো, যা ছিল ক্যাম্ফর ও জলমহিষীর দুধ মিশিয়ে তৈরি বরফযুক্ত পানীয়। এটি অনেকের মতে আধুনিক আইসক্রিমের পূর্বসূরি।
‘শারবত’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে। ইসলামী বিশ্বে ঠান্ডা মিষ্টি পানীয়—বরফে ঠান্ডা করা ফলের রস, চিনি ও ফুলের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি হতো, যা এখনো দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত। পারস্যে ‘ফালুদা’ নামে পরিচিত একটি বরফযুক্ত নুডলস মিষ্টান্ন তৈরি হতো, আর ভারতে মুঘল সম্রাটরা উপভোগ করতেন কুলফি— ঘন দুধ থেকে তৈরি বরফজাত মিষ্টি, যা এখনও আমাদের খুব পরিচিত।
আইসক্রিমের আসল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এলো যখন জানা গেল যে বরফে লবণ মেশালে একটি এক্সোথারমিক বিক্রিয়া হয়—যার ফলে বরফের গলনাঙ্ক অনেক কমে যায়। এই লবণাক্ত বরফে দুধ বা অন্যান্য তরল রেখে নাড়তে থাকলে, তাতে ছোট ছোট বরফকণা জমে যায় এবং তৈরি হয় ঝকঝকে, স্কুপযোগ্য আইসক্রিমের মতো এক মিশ্রণ।
প্রথম ইউরোপীয় আইসক্রিমের সন্ধান মেলে ১৬০০-এর দশকের ইতালিতে। ফ্লোরেন্স, নেপলস এবং প্যারিসের অভিজাতদের ভোজসভায় বরফ মেশানো মিষ্টি পানীয় পরিবেশিত হতো। ১৬৭২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস দ্বিতীয়ের ভোজসভায় ‘এক প্লেট আইসক্রিম’ পরিবেশনের কথা রেকর্ডে পাওয়া যায়। ১৬৯৪ সালে নেপলসের এক খাদ্য পরিবেশক অ্যান্টোনিও লাতিনি দুধ-ভিত্তিক আইসক্রিমের রেসিপি লেখেন।
আইসক্রিম ইউরোপ থেকে পাড়ি দেয় আমেরিকায়। ১৭৮৪ সালে জর্জ ওয়াশিংটন নিজ বাড়িতে একটি আইসক্রিম মেশিন বসান। টমাস জেফারসন প্যারিসে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সময় ফরাসি স্টাইলের ভ্যানিলা আইসক্রিমে মজে যান এবং আমেরিকায় ফিরেও সেই রেসিপি জনপ্রিয় করে তোলেন।
আধুনিক আইসক্রিমের ঠাণ্ডা যাত্রা
১৮৭৪: ফিলাডেলফিয়ার এক ফার্মাসিস্ট আইসক্রিম সোডা আবিষ্কার করেন।
১৮৮১: “সানডে” নামক আইসক্রিম তৈরির সূত্রপাত, যা মূলত রোববারে সোডা বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় তৈরি হয়।
১৯০৪: ওয়াফল কন প্রথম পরিচিত হয় সেন্ট লুইস ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে।
১৯২৩: পপসিকল পেটেন্ট হয়।
১৯৩০-এর দশক: সফট-সার্ভ আইসক্রিম বাজারে আসে।
১৯৭০: ফ্রোজেন ইয়োগার্টের যাত্রা শুরু।
আজ আইসক্রিম কেবল একটি শীতল ডেসার্ট নয়—একটি সংস্কৃতি, একটি অনুভূতি। উত্তর মেরুর বরফে ঢাকা গবেষণা কেন্দ্র হোক বা সাহারা মরুভূমির প্রান্তে, আইসক্রিম তার ভক্ত তৈরি করে চলেছে। প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার সংমিশ্রণে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন স্বাদ ও অভিজ্ঞতা।
যতই আমরা একে গ্রীষ্মের খাবার বলি না কেন, আইসক্রিমের ইতিহাস বলে দেয়—মানবসভ্যতা যখন থেকেই ‘ঠান্ডা’ খাবারের সন্ধান করেছে, তখন থেকেই এই মিষ্টান্ন ধীরে ধীরে আজকের রূপে এসেছে। তাই পরের বার যখন আইসক্রিম খাবেন, একটু থেমে ভাবুন—আপনি এক বিশাল ঐতিহ্যের অংশের স্বাদ নিচ্ছেন এক স্কুপের মাধ্যমে!
গ্রীষ্মের দাবদাহে ক্লান্ত মন আর শরীরকে এক নিমেষে ঠান্ডা করে দিতে পারে যেটি, তা হলো আইসক্রিম। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন—এই মজাদার ঠান্ডা খাবারটি কবে, কোথায় এবং কিভাবে আবিষ্কৃত হলো? চলুন, ঘুরে আসা যাক হাজার বছরের ইতিহাসের গলি থেকে—আইসক্রিমের জন্মকথায়।
আইসক্রিমের আদি ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের যেতে হবে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে, মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। সেখানকার অভিজাতরা গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা থাকতে বরফের গুদাম বানাতো। আবার প্রাচীন গ্রীসে বরফ দিয়ে ঠান্ডা করা পানীয় বিক্রি হতো রাস্তাঘাটে। রোমান সম্রাট নিরো (৩৭–৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) পাহাড়ি বরফে মধু মিশিয়ে পান করতেন—এক প্রকার প্রাচীন শারবতই বলা চলে।
চিনের ট্যাং রাজবংশের আমলে (৭ম থেকে ১০ম শতক) একধরনের মিষ্টি পানীয় তৈরি হতো, যা ছিল ক্যাম্ফর ও জলমহিষীর দুধ মিশিয়ে তৈরি বরফযুক্ত পানীয়। এটি অনেকের মতে আধুনিক আইসক্রিমের পূর্বসূরি।
‘শারবত’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে। ইসলামী বিশ্বে ঠান্ডা মিষ্টি পানীয়—বরফে ঠান্ডা করা ফলের রস, চিনি ও ফুলের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি হতো, যা এখনো দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত। পারস্যে ‘ফালুদা’ নামে পরিচিত একটি বরফযুক্ত নুডলস মিষ্টান্ন তৈরি হতো, আর ভারতে মুঘল সম্রাটরা উপভোগ করতেন কুলফি— ঘন দুধ থেকে তৈরি বরফজাত মিষ্টি, যা এখনও আমাদের খুব পরিচিত।
আইসক্রিমের আসল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এলো যখন জানা গেল যে বরফে লবণ মেশালে একটি এক্সোথারমিক বিক্রিয়া হয়—যার ফলে বরফের গলনাঙ্ক অনেক কমে যায়। এই লবণাক্ত বরফে দুধ বা অন্যান্য তরল রেখে নাড়তে থাকলে, তাতে ছোট ছোট বরফকণা জমে যায় এবং তৈরি হয় ঝকঝকে, স্কুপযোগ্য আইসক্রিমের মতো এক মিশ্রণ।
প্রথম ইউরোপীয় আইসক্রিমের সন্ধান মেলে ১৬০০-এর দশকের ইতালিতে। ফ্লোরেন্স, নেপলস এবং প্যারিসের অভিজাতদের ভোজসভায় বরফ মেশানো মিষ্টি পানীয় পরিবেশিত হতো। ১৬৭২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস দ্বিতীয়ের ভোজসভায় ‘এক প্লেট আইসক্রিম’ পরিবেশনের কথা রেকর্ডে পাওয়া যায়। ১৬৯৪ সালে নেপলসের এক খাদ্য পরিবেশক অ্যান্টোনিও লাতিনি দুধ-ভিত্তিক আইসক্রিমের রেসিপি লেখেন।
আইসক্রিম ইউরোপ থেকে পাড়ি দেয় আমেরিকায়। ১৭৮৪ সালে জর্জ ওয়াশিংটন নিজ বাড়িতে একটি আইসক্রিম মেশিন বসান। টমাস জেফারসন প্যারিসে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সময় ফরাসি স্টাইলের ভ্যানিলা আইসক্রিমে মজে যান এবং আমেরিকায় ফিরেও সেই রেসিপি জনপ্রিয় করে তোলেন।
আধুনিক আইসক্রিমের ঠাণ্ডা যাত্রা
১৮৭৪: ফিলাডেলফিয়ার এক ফার্মাসিস্ট আইসক্রিম সোডা আবিষ্কার করেন।
১৮৮১: “সানডে” নামক আইসক্রিম তৈরির সূত্রপাত, যা মূলত রোববারে সোডা বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় তৈরি হয়।
১৯০৪: ওয়াফল কন প্রথম পরিচিত হয় সেন্ট লুইস ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে।
১৯২৩: পপসিকল পেটেন্ট হয়।
১৯৩০-এর দশক: সফট-সার্ভ আইসক্রিম বাজারে আসে।
১৯৭০: ফ্রোজেন ইয়োগার্টের যাত্রা শুরু।
আজ আইসক্রিম কেবল একটি শীতল ডেসার্ট নয়—একটি সংস্কৃতি, একটি অনুভূতি। উত্তর মেরুর বরফে ঢাকা গবেষণা কেন্দ্র হোক বা সাহারা মরুভূমির প্রান্তে, আইসক্রিম তার ভক্ত তৈরি করে চলেছে। প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার সংমিশ্রণে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন স্বাদ ও অভিজ্ঞতা।
যতই আমরা একে গ্রীষ্মের খাবার বলি না কেন, আইসক্রিমের ইতিহাস বলে দেয়—মানবসভ্যতা যখন থেকেই ‘ঠান্ডা’ খাবারের সন্ধান করেছে, তখন থেকেই এই মিষ্টান্ন ধীরে ধীরে আজকের রূপে এসেছে। তাই পরের বার যখন আইসক্রিম খাবেন, একটু থেমে ভাবুন—আপনি এক বিশাল ঐতিহ্যের অংশের স্বাদ নিচ্ছেন এক স্কুপের মাধ্যমে!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন