উপেন্দ্রকিশোরের ‘টুনটুনির গল্প’ আজও বাঙালি বাল্যকালের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলা ভাষায় কিশোর মনের সেই নস্টালজিকতা এবার ইংরেজিতেও। অনুবাদক সাহিত্যিক কমলিনী চক্রবর্তী।
ছোটদের সঙ্গে মেলামেশাতে বরাবরই উপেন্দ্র ছিলেন দড়। এমনকী ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠা করেও তাঁর ছিল সেই শিশু-কাতরতা। আর ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটিও তারই ফল।
সেকালের মুদ্রণজগতের লোকের কাছে ‘পেনরোজ’ পত্রিকা ছিল বাইবেলের মতো। এই পত্রিকায় ১৮৯৭ থেকে ১৯১২–র মধ্যে উপেন্দ্রকিশোরের নয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। যার বিষয় ছিল ‘ছবি মুদ্রণ’।
আসলে ছোট থেকেই ছোটদের কাছে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। কোথায় কোনও খেলাধূলার সময় প্রায়শই বিচারকের ভূমিকায় নিজেই থাকতেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। শাস্তিও ছিল খুব মজার— ষোলোবার জোরে জোরে লাফাতে হবে। দলের মধ্যে থাকত তেরো–চোদ্দো বছরের কয়েকজন মেয়ে। তারা লাফাতে লজ্জা পেত। তাদের শাস্তি ছিল একটা গান গাওয়া।
ছোটদের প্রতি এই জনপ্রিয়তা উপেন্দ্রকিশোরের লেখাতেও প্রতিফলিত। তাই তো তাঁর ‘টুনটুনির গল্প’ আজও বাঙালি বাল্যকালের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে, বাঙালা ভাষা এখনও জনপ্রিয়, সে কথা এই ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে হলপ করে কখনওই বলা যাবে না। যদি একটু খতিয়ে দেখা যায়, তা হলে এর কিছুটা তল পাওয়া যায়। ছোট শিশুদের বর্ণমালা শেখাতে বসে দেখা যায় ‘অ-অজগর আসছে তেড়ে, আ-এ আমটি খাব পেড়ে’ ছাড়া কিছুই প্রায় নেই। ছাপার অক্ষরে তো নয়ই, অনলাইনেও নয়। অথচ ইংরেজি-র অ্যালফাবেটের বেলায় কত কী? শুধু ছবি বা বই নয়, কত রকমের কারুকর্ম (ক্রাফট), কত ধরনের খেলার সামগ্রী (ডিআইওয়াই কিট), নার্সারি রাইমস সবই রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সে সবের প্রতি শিশুরা আকৃষ্ট হয় বেশি।
বাংলা ভাষায় কিশোর মনের সেই নস্টালজিকতা এবার ইংরেজিতেও। ইংরেজি ভাষায়। ইংরেজি অক্ষরে। অনুবাদক সাহিত্যিক কমলিনী চক্রবর্তী। প্রকাশক রৌণক পাবলিকেশন। সঙ্গে বাড়তি পাওনা অলঙ্করণ। সঠিক মাত্রায় যে অলঙ্করণের অভাবে শিশু-কিশোরে মন থেকে বই অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছিল, সেই অপূর্ণতাকেই পূরণ করা চেষ্টা করেছেন প্রকাশক রূপা মজুমদার। নতুন ইংরেজি বইটির নাম 'Tailor Bird Tales'। অর্থাৎ, ১৯১০ সাল থেকে উড়ে চলা টুনটুনি পাখিটা এবার থেকে কথা বলবে ইংরেজিতেও। তাই তো অক্সফোর্ড বুক স্টোরে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্তর বলেই ফেললেন, আজ ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। আগামীতে আরও অনেক ভাষাতেও নিশ্চয়ই হবে। এ-পাখি আরও অনেক বছর উড়ে চলবেই...
টুনটুনির গল্প প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। মাঝখানে কেটে যায় ১০০ বছরের বেশি সময়। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই বইয়ের গল্পগুলোর আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। কারণ, একালের লেখকদের মতো আধুনিক ও নির্মেদ ভাষায় তিনি বর্ণনা করেছেন গল্পগুলো। নতুন ইংরেজি বইটিতে রয়েছে কুড়িটি গল্প।
অনুবাদ প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলতেই হবে। অনুবাদ এমন একটি পথ বা মাধ্যম, যা দিয়ে সাহিত্যের ইতিহাস এবং একটি ভাষা-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনের নানা পরিপ্রেক্ষিত বোঝা সম্ভব। অনুবাদ কেবল একটি পদ্ধতি বা সেই পদ্ধতিজাত উৎপাদন নয়, অনুবাদ হল ইতিহাসকে বোঝার একটা মাধ্যম। লেখিকা কমলিনী নিজে সমালোচক-লেখিকা হিসাবে পরিচিত; তিনি জানাচ্ছেন, বাংলা কবিতার নিবিড় অধ্যয়ন করতে করতে তিনি উপলব্ধি করেছেন— অনুবাদ প্রসঙ্গে আলোচনা বা অনুবাদের বিভিন্ন অনুষঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। অনুবাদচর্চা নিজে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র জ্ঞানচর্চার পরিসর। আর তাই তো উপেন্দ্রকিশোরের নিজস্ব ধারা থেকে বিচ্যুত না হয়েও একটা স্বতন্ত্র ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। পাশাপাশি, শব্দ চয়নেও রেখেছেন সরলতা। যা শিশু-কিশোর মনে সহজেই ঠাঁই করে নিতে পারে। কমলিনীর কথায় রেশ টেনেই প্রকাশক রূপা মজুমদারের আশা, ভাষার সীমাবন্ধতার জন্য অনেকেই উপেন্দ্রকিশোরের সাহিত্য-রস থেকে অনেকে বঞ্চিত হতেন। এই বইটি সেই সব খুদে থেকে বড়—সকলের অতৃপ্ততা পূরণ করবে।
ছোটদের সঙ্গে মেলামেশাতে বরাবরই উপেন্দ্র ছিলেন দড়। এমনকী ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠা করেও তাঁর ছিল সেই শিশু-কাতরতা। আর ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটিও তারই ফল।
সেকালের মুদ্রণজগতের লোকের কাছে ‘পেনরোজ’ পত্রিকা ছিল বাইবেলের মতো। এই পত্রিকায় ১৮৯৭ থেকে ১৯১২–র মধ্যে উপেন্দ্রকিশোরের নয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। যার বিষয় ছিল ‘ছবি মুদ্রণ’।
আসলে ছোট থেকেই ছোটদের কাছে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। কোথায় কোনও খেলাধূলার সময় প্রায়শই বিচারকের ভূমিকায় নিজেই থাকতেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। শাস্তিও ছিল খুব মজার— ষোলোবার জোরে জোরে লাফাতে হবে। দলের মধ্যে থাকত তেরো–চোদ্দো বছরের কয়েকজন মেয়ে। তারা লাফাতে লজ্জা পেত। তাদের শাস্তি ছিল একটা গান গাওয়া।
ছোটদের প্রতি এই জনপ্রিয়তা উপেন্দ্রকিশোরের লেখাতেও প্রতিফলিত। তাই তো তাঁর ‘টুনটুনির গল্প’ আজও বাঙালি বাল্যকালের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে, বাঙালা ভাষা এখনও জনপ্রিয়, সে কথা এই ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে হলপ করে কখনওই বলা যাবে না। যদি একটু খতিয়ে দেখা যায়, তা হলে এর কিছুটা তল পাওয়া যায়। ছোট শিশুদের বর্ণমালা শেখাতে বসে দেখা যায় ‘অ-অজগর আসছে তেড়ে, আ-এ আমটি খাব পেড়ে’ ছাড়া কিছুই প্রায় নেই। ছাপার অক্ষরে তো নয়ই, অনলাইনেও নয়। অথচ ইংরেজি-র অ্যালফাবেটের বেলায় কত কী? শুধু ছবি বা বই নয়, কত রকমের কারুকর্ম (ক্রাফট), কত ধরনের খেলার সামগ্রী (ডিআইওয়াই কিট), নার্সারি রাইমস সবই রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সে সবের প্রতি শিশুরা আকৃষ্ট হয় বেশি।
বাংলা ভাষায় কিশোর মনের সেই নস্টালজিকতা এবার ইংরেজিতেও। ইংরেজি ভাষায়। ইংরেজি অক্ষরে। অনুবাদক সাহিত্যিক কমলিনী চক্রবর্তী। প্রকাশক রৌণক পাবলিকেশন। সঙ্গে বাড়তি পাওনা অলঙ্করণ। সঠিক মাত্রায় যে অলঙ্করণের অভাবে শিশু-কিশোরে মন থেকে বই অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছিল, সেই অপূর্ণতাকেই পূরণ করা চেষ্টা করেছেন প্রকাশক রূপা মজুমদার। নতুন ইংরেজি বইটির নাম 'Tailor Bird Tales'। অর্থাৎ, ১৯১০ সাল থেকে উড়ে চলা টুনটুনি পাখিটা এবার থেকে কথা বলবে ইংরেজিতেও। তাই তো অক্সফোর্ড বুক স্টোরে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্তর বলেই ফেললেন, আজ ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। আগামীতে আরও অনেক ভাষাতেও নিশ্চয়ই হবে। এ-পাখি আরও অনেক বছর উড়ে চলবেই...
টুনটুনির গল্প প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। মাঝখানে কেটে যায় ১০০ বছরের বেশি সময়। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই বইয়ের গল্পগুলোর আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। কারণ, একালের লেখকদের মতো আধুনিক ও নির্মেদ ভাষায় তিনি বর্ণনা করেছেন গল্পগুলো। নতুন ইংরেজি বইটিতে রয়েছে কুড়িটি গল্প।
অনুবাদ প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলতেই হবে। অনুবাদ এমন একটি পথ বা মাধ্যম, যা দিয়ে সাহিত্যের ইতিহাস এবং একটি ভাষা-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনের নানা পরিপ্রেক্ষিত বোঝা সম্ভব। অনুবাদ কেবল একটি পদ্ধতি বা সেই পদ্ধতিজাত উৎপাদন নয়, অনুবাদ হল ইতিহাসকে বোঝার একটা মাধ্যম। লেখিকা কমলিনী নিজে সমালোচক-লেখিকা হিসাবে পরিচিত; তিনি জানাচ্ছেন, বাংলা কবিতার নিবিড় অধ্যয়ন করতে করতে তিনি উপলব্ধি করেছেন— অনুবাদ প্রসঙ্গে আলোচনা বা অনুবাদের বিভিন্ন অনুষঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। অনুবাদচর্চা নিজে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র জ্ঞানচর্চার পরিসর। আর তাই তো উপেন্দ্রকিশোরের নিজস্ব ধারা থেকে বিচ্যুত না হয়েও একটা স্বতন্ত্র ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। পাশাপাশি, শব্দ চয়নেও রেখেছেন সরলতা। যা শিশু-কিশোর মনে সহজেই ঠাঁই করে নিতে পারে। কমলিনীর কথায় রেশ টেনেই প্রকাশক রূপা মজুমদারের আশা, ভাষার সীমাবন্ধতার জন্য অনেকেই উপেন্দ্রকিশোরের সাহিত্য-রস থেকে অনেকে বঞ্চিত হতেন। এই বইটি সেই সব খুদে থেকে বড়—সকলের অতৃপ্ততা পূরণ করবে।
শীর্ষেন্দু
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন