বিশ্বাসের গল্প আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় আরও কিছু অলৌকিক বেঁচে যাওয়া মানুষের কাছে, যাঁরা প্রায় অসম্ভব পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে ফিরে এসেছেন।
ইংল্যান্ডের নাগরিক বিশ্বাস তাঁর ভাইকে নিয়ে ভারতে এসেছিলেন পরিবারের কাছে। এবার ফিরতি পথ, গন্তব্য লন্ডন। কিন্তু বিমানেই শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়। এক মুহূর্তে তাঁর চারপাশ জ্বলে উঠেছে, মানুষ চিৎকার করছে, ধোঁয়ায় দম আটকে যাচ্ছে—এ যেন দুঃস্বপ্ন। তারপর সব অন্ধকার। ফের চেতনা ফিরে আসে হাসপাতালে, শরীর জখম, কিন্তু প্রাণ আছে। এই অলৌকিক বেঁচে ফেরা কেবল এখটি ঘটনা নয়—এ এক বিস্ময়।
১৯৭১ সালে পেরুর আকাশে বজ্রঝড়ে পড়ে গিয়েছিল LANSA Flight 508। জঙ্গলের মাঝে ভেঙে পড়া সেই বিমানে ১৭ বছরের জুলিয়ানা কোয়েপকে ছাড়া আর কেউ বাঁচেননি। তিনি ১০,০০০ ফুট ওপরে আকাশ থেকে পড়েও অলৌকিকভাবে জীবিত ছিলেন। একা একা হেঁটে, আহত শরীর নিয়ে অ্যামাজনের গভীর জঙ্গল পেরিয়ে ১১ দিন পর পৌঁছান লোকালয়ে।
২০০৯ সালে, ইয়েমেনিয়ার ফ্লাইট ৬২৬ ভারত মহাসাগরের বুকে ডুবে যায়। সমুদ্রে ধ্বংসস্তূপের মাঝে এক ১২ বছরের কিশোরী, বাহিয়া বকারি, ধ্বংসাবশেষ আঁকড়ে ৯ ঘণ্টা ভেসে ছিলেন। তাঁর চোখে তখনও আতঙ্ক, তবু প্রাণের লড়াইয়ে জিতেছিলেন তিনিই।
১৯৮৭ সালে আমেরিকায় Northwest Airlines-এর একটি বিমান টেক-অফের সময় ভেঙে পড়ে। ১৫৫ জনের মধ্যে বেঁচে যান কেবল ৪ বছরের ছোট্ট সিসেলিয়া চিচান। তাঁর মায়ের শরীর তাঁকে ঢেকে দিয়েছিল—সেই মা মারা গেলেও, মেয়েটি বেঁচে যায়। এই ঘটনা তখন গোটা আমেরিকার আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আবার মনে পড়ে যায় ১৯৭২ সালের আন্দেস দুর্ঘটনার কথা। একটি রাগবি দল উরুগুয়ে থেকে চিলি যাচ্ছিল। বিমানের দুর্ঘটনায় প্রথমে কিছুজন বেঁচে গেলেও, উদ্ধার আসেনি কোনও উদ্ধারকারী দল। বরফে ঢাকা পর্বতে ৭২ দিন লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ১৬ জন জীবিত ফিরে আসেন। আর সেই বেঁচে থাকা ছিল হয়তো অমানবিক— বন্ধুদের মৃতদেহ খেতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা।
বিশ্বাস কুমার রমেশও এখন সেই বিস্ময়কর বেঁচে ফেরাদের তালিকায়, যাঁদের জীবন একটি নতুন সংজ্ঞা পেয়েছে। ধ্বংসের মুখেও কীভাবে মানুষ বাঁচতে পারে, সেটাই যেন প্রমাণ করে এইসব গল্প। হয়তো ঈশ্বর, হয়তো ভাগ্য, হয়তো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোনও অভাবনীয় ব্যতিক্রম— কারণ যাই হোক না কেন, এমন অলৌকিক ঘটনাগুলো মানুষকে বিস্ময়ে মোড়া এক নতুন বিশ্বাস দেয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন