নিশ্চিত ধংসের মুখ থেকে ফিরে এসেছিল যেসব বিমান

সাম্প্রতিককালে কয়েকটি ক্ষেত্রে মেডে বার্তা প্রেরণের পর প্রায় অলৌকিকভাবে বিমান রক্ষা পেয়েছে। অথচ, সেই অতি জরুরি বার্তায় এটিসি কোনও সাহায‌্যই করতে পারেনি। সেই কাহিনীও চমকপ্রদ।

নিশ্চিত ধংসের মুখ থেকে ফিরে এসেছিল যেসব বিমান

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই ১৭১ টেক অফের খানিকক্ষণের মধ্যেই আমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প‌্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মাটিতে আছড়ে পড়ে। উড়ানের পাইলট দুর্ঘটনার কয়েক মুহূর্ত আগে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) আপাৎকালীন বার্তা ‘মেডে কল’ পাঠিয়েছিলেন। ‘মেডে’ (Mayday) সতর্কতা একটি আন্তর্জাতিক জরুরি সংকেত যা বিমান গুরুতর বিপদের মুখে পড়লে ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি মূলত রেডিওর মাধ্যমে তিনবার বলা হয়— ‘Mayday, Mayday, Mayday’— যাতে এটি সাধারণ যোগাযোগ থেকে আলাদা করে শনাক্ত করা যায়।

যখন কোনও বিমান গুরুতর সমস্যার মুখে পড়ে— যেমন ইঞ্জিন বিকল, অগ্নিকাণ্ড, হঠাৎ ককপিটে ধোঁয়া ঢুকে যাওয়া, বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা– তখন পাইলট এটিসি-কে সংকেত পাঠায় এই বলে যে বিমানে জরুরি পরস্থিতি। শব্দটি এসেছে ফরাসী শব্দ ‘m’aidez’ থেকে যার অর্থ ‘আমাকে সাহায্য করুন’। এটি ১৯২০-র দশকে প্রথম চালু হয়। মেডে সংকেতের গুরুত্ব আইনি ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এর অপব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। এই বার্তাটি বুঝিয়ে দেয় যে বিমানটি বিপদের মুখে পড়েছে এবং অবিলম্বে সহায়তা দরকার। পাইলট এই বার্তাটি দেন এভাবে– “Mayday, Mayday, Mayday. This is Air India 221. Engine failure. Request emergency landing at Mumbai airport.” এই বার্তা পাওয়ার পর এটিসি থেকে নিশ্চিত করা হয় বিমানটি রানওয়েতে ফিরতে পারে। তার আগে রানওয়ে প্রস্তুত করা, ফায়ারব্রিগেড ও অ‌্যাম্বুল‌্যান্সের ব‌্যবস্থা করে ফেলা হয়। আসলে পাইলটের থেকে মেডে বার্তা পাওয়ার পরেই সময়ের আগে দৌড়ের চ‌্যালেঞ্জ তৈরি হয়।

সাম্প্রতিককালে কয়েকটি ক্ষেত্রে মেডে বার্তা প্রেরণের পর প্রায় অলৌকিকভাবে বিমান রক্ষা পেয়েছে। অথচ, সেই অতি জরুরি বার্তায় এটিসি কোনও সাহায‌্যই করতে পারেনি।

১. US Airways Flight 1549 : পাখির ধাক্কায় দুই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

Mayday বার্তা: “Mayday, Mayday, Mayday... this is Cactus 1549. We lost thrust in both engines. We’re turning back towards LaGuardia.”

ফল: ক্যাপ্টেন চেসলি সালেনবার্গার (Sully) হাডসন নদীতে বিমান অবতরণ করান। ১৫৫ জন যাত্রী ও ক্রু অক্ষত ছিলেন। এটি আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ‘Mayday’ ঘটনার একটি।

২. Air Transat Flight 236 (2001) : ফুয়েল লিক হয়ে দুই ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায় মাঝ আকাশে।

Mayday বার্তা: “Mayday, Mayday. We have a fuel emergency. Engines flamed out, requesting immediate landing.”

ফল: বিমানটি প্রায় ১২০ কিমি গ্লাইড করে সফলভাবে পর্তুগালের একটি সামরিক ঘাঁটিতে নামায়। ৩০৬ জন যাত্রী প্রাণে বাঁচেন।

৩. British Airways Flight 9 (1982) : জাভা দ্বীপের কাছে আকাশে উড়তে গিয়ে একটি আগ্নেয়গিরির ছাই মেঘে ঢুকে পড়ে বিমানটি। চারটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায়।

Mayday বার্তা: “Ladies and gentlemen, this is your captain speaking. We have a small problem. All four engines have stopped.”

ফল: পরবর্তীতে তিনটি ইঞ্জিন চালু হয়। বিমানটি সফলভাবে জরুরি অবতরণ করে। কেউ আহত হয়নি।

৪. Lufthansa Flight LH1829 (2014) : বিমানের সেন্সর বরফ জমে গিয়েছিল। পাইলটরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

Mayday বার্তা: “Mayday, Mayday, Mayday, Lufthansa one eight two nine, control problem, descending immediately.”

ফল: বিমানটি সফলভাবে অবতরণ করে, যাত্রীদের কিছু হয়নি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন