সুদেষ্ণার কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল—তাঁর ভাষার আন্তরিকতা এবং দৈনন্দিন জীবনের চিত্রকল্প।
সুদেষ্ণার কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল—তাঁর ভাষার আন্তরিকতা এবং দৈনন্দিন জীবনের চিত্রকল্প। অতি সাধারণ মুহূর্ত, পথের ধুলো, বাসে চড়া, মা-বাবার মুখ, প্রেমের অভিমান, শহরের শব্দ কিংবা নিঃশব্দ সবকিছুই তাঁর কবিতায় রসদ হয়ে ওঠে।
তিনি নিজে বলেছেন, “আমার কবিতায় জটিল চাতুর্য নেই, আছে শুধু জীবনযাপনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা।” এই সরল স্বীকারোক্তিই তাঁর কবিতার অন্তরের শক্তি।‘ভাঙা বাউল’ কাব্যগ্রন্থটি মূলত শহর ও গ্রাম, আধুনিকতা ও শিকড়, সংবেদন ও প্রতিবাদের মিশেলে এক সংলাপ। তাঁর কবিতায় কখনও উঠে আসে প্রতিবাদ—একটি মেয়ে হিসেবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, কখনও আবার গভীর বিষণ্নতা—যেখানে একাকিত্বই সঙ্গী।
এই কাব্যগ্রন্থে তিনি কেবলমাত্র কবি নন, একজন পর্যবেক্ষক, এক অনুচ্চার কণ্ঠ—যিনি বলে ওঠেন:
"কেউ শুনছিল না বলে / আমি নিজেকে শোনাচ্ছিলাম কবিতা"।
জাতীয় সাহিত্য আকাদেমির মতো সংস্থা যখন নতুন প্রজন্মের কবিতাকে পুরস্কৃত করে, তখন বোঝা যায়— আসলে ভাষার পরম্পরা নতুন কণ্ঠে প্রবাহিত হচ্ছে। সুদেষ্ণা সেই কণ্ঠস্বরের অন্যতম প্রতিনিধি। তাঁর কবিতা শহুরে শিক্ষিত পাঠকের পাশাপাশি, মফস্বলের প্রান্তিক পাঠকের কাছেও প্রাসঙ্গিক। কারণ, তাঁর শব্দচয়ন ‘বইয়ের’ নয়, বরং জীবনের।
সুদেষ্ণার এই স্বীকৃতি বাংলা কবিতার জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি তরুণ কবিদের জন্য প্রেরণার। বাংলা সাহিত্যে যেখানে অনেক সময় ভাষার আলঙ্কারিকতা বা সঙ্কেতের জালে পাঠক হারিয়ে যান, সেখানে সুদেষ্ণা যেন একটি খোলা জানালা, যেখান দিয়ে ঢোকে আলো, হাওয়া, আর কুয়াশা—সবটাই জীবনের।
এই প্রাপ্তি শুধুই ব্যক্তিগত নয়, এটা বাংলা কবিতার বর্তমান ও ভবিষ্যতের এক আশ্বাস।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন