অশেষ রায় একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। বিতর্কিত ব্যক্তি। আরেকজন প্রয়াত বামপন্থী নেতা রজতাভ সেন। দু’জনের দীর্ঘদিনের পরিচয়। সাংবাদিক প্ল্যানচেটে আহ্বান করলেন সেই প্রয়াত নেতাকে। তিনি এলেন। কী কথা হল দু’জনের?
অশেষ রায়: আপনাকে সামনে দেখে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, রজতাভদা। আপনি চলে যাবার পর সব বদলে গেছে।
রজতাভ সেন: (একটু হেসে) বদল তো হবেই। সময় কারও জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। কিন্তু বলো, এত বছর পর তুমি এখন কেমন আছো?
অশেষ: আছি কি! লড়ছি বলাই ভালো।
রজতাভ: আমি যখন রাজনীতি করতাম, চেষ্টা করতাম সবাইকে বোঝাতে — নীতি ছাড়া সংগঠন টেকে না। সংবাদমাধ্যমও একটা অস্ত্র, কিন্তু যদি সে বিকৃত হয়, তখন তা ধারাল ছুরির মতো নিজের গায়েই আঘাত করে।
অশেষ: আপনি ছিলেন রণকৌশলের কারিগর। পার্টিকে ২০০৬ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেলেন। অথচ পরে দলে এসব কথা কেউ ভাবে না। লোভ, প্রতিহিংসা, দুর্নীতিই শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রজতাভ: রাজনীতি আর নীতির ফারাক আজ ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে। তোমার মতো লোকেরা যদি সাহস করে মুখ খুলতে পারো, তাহলে হয়তো কিছুটা আলো ফিরবে।
অশেষ: আমি চেষ্টা করছি রজতাভদা। এখন জনরাজ পার্টিতেই আছি, কিন্তু... — প্রশ্ন করি, প্রতিবাদ করি। বিচারব্যবস্থায় ভরসা রেখেছি।
রজতাভ: ভালো কথা। মনে রেখো, রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব। সৎভাবে থেকো, সত্য বলো — তবেই ইতিহাস তোমায় মনে রাখবে। তুমি জানো অশেষ, যখন প্রথম তোমার লেখা পড়েছিলাম, ভেবেছিলাম — এই ছেলে একদিন অনেক কিছু করবে। শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সমাজ-রাজনীতিতেও।
অশেষ: আপনি আমার লেখা পড়তেন? সেটা তো কখনও বলেননি!
রজতাভ: আমার কাজ ছিল সবাইকে মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। তুমিও ছিলে সেই তালিকায়। তৎকালীন শাসকদের সমালোচনায় যেমন নিখুঁত ছিলে, তেমনি গোপন তথ্য অনুসন্ধানেও ছিলে সাহসী।
অশেষ: সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে এলাম — কারণ ভেবেছিলাম, ভেতর থেকে বদল আনা যায়। কিন্তু আজকাল প্রশ্ন ওঠে — আদৌ কি তা সম্ভব?
রজতাভ: (একটু চুপ থেকে) রাজনীতি কঠিন জায়গা, অশেষ। কিন্তু যদি ভিতরে সততা থাকে, তবে একদিন না একদিন আলো ঠিকই ফোটে।
অশেষ: তবে আমি ‘ভিন্ন মতের ভেতরের মানুষ’ — প্রশ্ন করি, বিরোধিতা করি, দলেও মুখ খুলে কথা বলি। তাই অনেক সময়ই একঘরে হয়ে যাই।
রজতাভ: বামপন্থার মূল ভিত্তি তো সেই কথাই বলে — ‘স্বাধীন মত’, ‘বিরুদ্ধ সুর’। আজকাল সেটা কোথাও হারিয়ে গেছে। সেদিন যদি আরও কয়েকটা বছর সময় পেতাম...
অশেষ: (আবেগঘন গলায়) আপনি থাকলে হয়তো ফ্রন্ট ২০১১-য় ভেঙে পড়তো না। আপনি ছিলেন পার্টির হৃদপিণ্ড। আপনি চলে যাওয়ার পরেই পার্টির গতি হারিয়ে গেল।
রজতাভ: (একটু কঠোর স্বরে) পার্টি ভুল করেছিল। আমরা সবাই করেছিলাম। মানুষের কথা না শুনলে, বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন হলে দল যত পুরনোই হোক, একদিন ভাঙবেই। এটা ইতিহাসের নিয়ম।
অশেষ: আপনি যদি থাকতেন, আমাকে হয়তো কেউ চক্রান্ত করে জেলে পাঠাতে পারত না। পরমা কেলেঙ্কারির দায় মাথায় চাপিয়ে আমাকে দোষী বানানো হল, অথচ আমি তো সব ফাঁস করেছিলাম!
রজতাভ: (চোখে মায়া নিয়ে) প্রশ্ন তুললে, সত্য বললে — শাস্তি পেতেই হয়। কিন্তু সেটাই একমাত্র পথ যা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করে। অশেষ, তুমি যদি ভিতরে ভিতরে পুড়েও সত্যটা আঁকড়ে ধরো, তাহলে তোমার লড়াই সার্থক হবে।
অশেষ: কখনও মনে হয়, যদি লেখালেখিতেই থাকতাম ভালো করে। আজকাল তো অনেকেই সাংবাদিকতা আর মিডিয়াকে হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলেছে।
রজতাভ: হ্যাঁ, আজকের মিডিয়াতে অনেকেই 'মঞ্চস্থ নাটক' চালায়। অথচ একসময় আমরা চাইতাম সংবাদপত্র হোক জনমতের আয়না। রাজনীতিকেরা সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের সংশোধন করুক।
অশেষ: আপনি বলুন, আজকের তরুণদের কী বলব? বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতিতে আদর্শের জায়গা কোথায়?
রজতাভ: তাদের বলো — যদি কেউ নিজেকে প্রশ্ন করে, দিনশেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে, তাহলেই সে আদর্শ ধরে রেখেছে। ক্ষমতা চিরকাল টেকে না, কিন্তু ব্যক্তিত্ব টেকে। ...চলো, আলোটা এখন তোমার হাতে। যতটুকু পারো, জ্বালিয়ে রেখো। তোমার চোখে ক্লান্তি দেখছি অশেষ। তবে সঙ্গে অদ্ভুত এক জেদও আছে।
অশেষ: জেদটা বোধহয় আপনারা আমাদের মধ্যে গেঁথে দিয়ে গিয়েছেন রজতাভদা। সাংবাদিকতা করি, রাজনীতিও করছি—কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, আদর্শ আর বাস্তবতার ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
রজতাভ: (আলতো হাসি) যেখানে আদর্শের সঙ্গে বাস্তবতার সংঘর্ষ হয়, সেখানেই রাজনীতির জন্ম। তুমি কি এখন রাজনীতিকে বিশ্বাস করো না!
অশেষ: বিশ্বাস করি, কিন্তু সংশয়ে ভুগি। এখন যে রাজনীতি দেখি, তাতে আদর্শ যেন লোক দেখানো, মতাদর্শ যেন পুরনো পোস্টারের মতো– বিবর্ণ।
রজতাভ: আমরাও ভুল করেছিলাম। মানুষ থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু চেষ্টা করতাম মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরতে। রাজনীতি আমাদের কাছে ছিল জনগণের স্বর।
অশেষ: আমি যখন সাংবাদিকতা করতাম, আপনাদের মতামত খুব কাছ থেকে দেখেছি। আপনি ছিলেন আলাদা — সংগঠক, কিন্তু ভেতর থেকে পাঠকও। কথাবার্তায় ব্যঞ্জনা ছিল, তীক্ষ্ণতা ছিল। আজ সেসব নেই। শুধু স্লোগান আর ভিন্নমত দমন।
রজতাভ: (গম্ভীরভাবে) দল চালাতে গেলে কঠোরতা দরকার, কিন্তু সেই কঠোরতা যদি চেতনার জায়গায় হয়, তা ভালো। যদি মানুষের কথা থামিয়ে দেয়, তা ভয়ংকর।
অশেষ: আজ তো প্রশ্ন তোলাই যেন অপরাধ। যারা প্রশ্ন করে, তারা দলের শত্রু হয়ে যায়।
রজতাভ: তুমি মনে রেখো, প্রশ্ন করাই সত্যিকারের আনুগত্যের প্রথম ধাপ। নিঃশব্দ আনুগত্য শেষ পর্যন্ত সর্বনাশ ডেকে আনে।
অশেষ: আপনার মৃত্যুর পর বামপন্থার ভারসাম্যটাই ভেঙে পড়লো। আপনি ছিলেন বোঝাপড়ার কেন্দ্রে। এখনকার নেতৃত্ব যেন নিজের ছায়াকেও ভয় পায়।
রজতাভ: আমি চলে যাওয়ার পর অনেকেই বলেছিল, ‘পার্টি’র হৃদয়টা আর কাঁপে না। কিন্তু পার্টির মৃত্যু হয়নি, শুধু দিশা হারিয়েছে। সেই দিশা হয়তো তোমাদের মধ্যেই আছে।
অশেষ: (কিছুটা বিস্ময়ে) আমাদের মধ্যেই? কিন্তু আমরা তো অনেকেই ভিন্ন পথে, ভিন্ন দলের মানুষ।
রজতাভ: দল বদলায়, সময় বদলায়। কিন্তু মানুষের কথা বলার সাহস — সেটাই আসল বামপন্থা। সেটা কেবল পার্টির মিটিংয়ে নয়, গরিবের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে হয়।
অশেষ: আপনি থাকলে বোধহয় আমরা আরও শিখতে পারতাম—কীভাবে রাজনীতিকে নরম রাখা যায়, অথচ নীতিতে অনড় থাকা যায়।
রজতাভ: তোমরা যদি প্রশ্ন করতে শেখো, যদি মানুষের কান্নাকে খবর বানাও, আর পেটের খিদের বদলে ভোটের অঙ্ক না ধরো—তবে রাজনীতি এখনও বাঁচবে। আলো এখনও জ্বলে।
সম্পাদকীয় টিমের বক্তব্য : সব চরিত্র কাল্পনিক। এর সঙ্গে কোনও ব্যক্তি বা বাস্তব ঘটনার মিল থাকলে তা অনঅভিপ্রেত। এর বিশেষত হল, এই কাল্পনিক আলাপ চ্যাটজপিটি লিখেছে। অনেকেই বলে থাকেন চ্যাটজিপিটি বাংলায় ঠিকভাবে কাজ করে না। কিন্তু আমরা বাস্তবসম্মত একটি সংলাপ লেখাতে পেরেছি। একটি একটি পরীক্ষামূলক প্রয়াস। এখানে কাউকে মহিমান্বিত করা বা হেয় করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল বা অমিল খোঁজার চেষ্টা না করাই ভাল।
অশেষ রায়: আপনাকে সামনে দেখে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, রজতাভদা। আপনি চলে যাবার পর সব বদলে গেছে।
রজতাভ সেন: (একটু হেসে) বদল তো হবেই। সময় কারও জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। কিন্তু বলো, এত বছর পর তুমি এখন কেমন আছো?
অশেষ: আছি কি! লড়ছি বলাই ভালো।
রজতাভ: আমি যখন রাজনীতি করতাম, চেষ্টা করতাম সবাইকে বোঝাতে — নীতি ছাড়া সংগঠন টেকে না। সংবাদমাধ্যমও একটা অস্ত্র, কিন্তু যদি সে বিকৃত হয়, তখন তা ধারাল ছুরির মতো নিজের গায়েই আঘাত করে।
অশেষ: আপনি ছিলেন রণকৌশলের কারিগর। পার্টিকে ২০০৬ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেলেন। অথচ পরে দলে এসব কথা কেউ ভাবে না। লোভ, প্রতিহিংসা, দুর্নীতিই শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রজতাভ: রাজনীতি আর নীতির ফারাক আজ ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে। তোমার মতো লোকেরা যদি সাহস করে মুখ খুলতে পারো, তাহলে হয়তো কিছুটা আলো ফিরবে।
অশেষ: আমি চেষ্টা করছি রজতাভদা। এখন জনরাজ পার্টিতেই আছি, কিন্তু... — প্রশ্ন করি, প্রতিবাদ করি। বিচারব্যবস্থায় ভরসা রেখেছি।
রজতাভ: ভালো কথা। মনে রেখো, রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব। সৎভাবে থেকো, সত্য বলো — তবেই ইতিহাস তোমায় মনে রাখবে। তুমি জানো অশেষ, যখন প্রথম তোমার লেখা পড়েছিলাম, ভেবেছিলাম — এই ছেলে একদিন অনেক কিছু করবে। শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সমাজ-রাজনীতিতেও।
অশেষ: আপনি আমার লেখা পড়তেন? সেটা তো কখনও বলেননি!
রজতাভ: আমার কাজ ছিল সবাইকে মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। তুমিও ছিলে সেই তালিকায়। তৎকালীন শাসকদের সমালোচনায় যেমন নিখুঁত ছিলে, তেমনি গোপন তথ্য অনুসন্ধানেও ছিলে সাহসী।
অশেষ: সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে এলাম — কারণ ভেবেছিলাম, ভেতর থেকে বদল আনা যায়। কিন্তু আজকাল প্রশ্ন ওঠে — আদৌ কি তা সম্ভব?
রজতাভ: (একটু চুপ থেকে) রাজনীতি কঠিন জায়গা, অশেষ। কিন্তু যদি ভিতরে সততা থাকে, তবে একদিন না একদিন আলো ঠিকই ফোটে।
অশেষ: তবে আমি ‘ভিন্ন মতের ভেতরের মানুষ’ — প্রশ্ন করি, বিরোধিতা করি, দলেও মুখ খুলে কথা বলি। তাই অনেক সময়ই একঘরে হয়ে যাই।
রজতাভ: বামপন্থার মূল ভিত্তি তো সেই কথাই বলে — ‘স্বাধীন মত’, ‘বিরুদ্ধ সুর’। আজকাল সেটা কোথাও হারিয়ে গেছে। সেদিন যদি আরও কয়েকটা বছর সময় পেতাম...
অশেষ: (আবেগঘন গলায়) আপনি থাকলে হয়তো ফ্রন্ট ২০১১-য় ভেঙে পড়তো না। আপনি ছিলেন পার্টির হৃদপিণ্ড। আপনি চলে যাওয়ার পরেই পার্টির গতি হারিয়ে গেল।
রজতাভ: (একটু কঠোর স্বরে) পার্টি ভুল করেছিল। আমরা সবাই করেছিলাম। মানুষের কথা না শুনলে, বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন হলে দল যত পুরনোই হোক, একদিন ভাঙবেই। এটা ইতিহাসের নিয়ম।
অশেষ: আপনি যদি থাকতেন, আমাকে হয়তো কেউ চক্রান্ত করে জেলে পাঠাতে পারত না। পরমা কেলেঙ্কারির দায় মাথায় চাপিয়ে আমাকে দোষী বানানো হল, অথচ আমি তো সব ফাঁস করেছিলাম!
রজতাভ: (চোখে মায়া নিয়ে) প্রশ্ন তুললে, সত্য বললে — শাস্তি পেতেই হয়। কিন্তু সেটাই একমাত্র পথ যা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করে। অশেষ, তুমি যদি ভিতরে ভিতরে পুড়েও সত্যটা আঁকড়ে ধরো, তাহলে তোমার লড়াই সার্থক হবে।
অশেষ: কখনও মনে হয়, যদি লেখালেখিতেই থাকতাম ভালো করে। আজকাল তো অনেকেই সাংবাদিকতা আর মিডিয়াকে হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলেছে।
রজতাভ: হ্যাঁ, আজকের মিডিয়াতে অনেকেই 'মঞ্চস্থ নাটক' চালায়। অথচ একসময় আমরা চাইতাম সংবাদপত্র হোক জনমতের আয়না। রাজনীতিকেরা সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের সংশোধন করুক।
অশেষ: আপনি বলুন, আজকের তরুণদের কী বলব? বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতিতে আদর্শের জায়গা কোথায়?
রজতাভ: তাদের বলো — যদি কেউ নিজেকে প্রশ্ন করে, দিনশেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে, তাহলেই সে আদর্শ ধরে রেখেছে। ক্ষমতা চিরকাল টেকে না, কিন্তু ব্যক্তিত্ব টেকে। ...চলো, আলোটা এখন তোমার হাতে। যতটুকু পারো, জ্বালিয়ে রেখো। তোমার চোখে ক্লান্তি দেখছি অশেষ। তবে সঙ্গে অদ্ভুত এক জেদও আছে।
অশেষ: জেদটা বোধহয় আপনারা আমাদের মধ্যে গেঁথে দিয়ে গিয়েছেন রজতাভদা। সাংবাদিকতা করি, রাজনীতিও করছি—কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, আদর্শ আর বাস্তবতার ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
রজতাভ: (আলতো হাসি) যেখানে আদর্শের সঙ্গে বাস্তবতার সংঘর্ষ হয়, সেখানেই রাজনীতির জন্ম। তুমি কি এখন রাজনীতিকে বিশ্বাস করো না!
অশেষ: বিশ্বাস করি, কিন্তু সংশয়ে ভুগি। এখন যে রাজনীতি দেখি, তাতে আদর্শ যেন লোক দেখানো, মতাদর্শ যেন পুরনো পোস্টারের মতো– বিবর্ণ।
রজতাভ: আমরাও ভুল করেছিলাম। মানুষ থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু চেষ্টা করতাম মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরতে। রাজনীতি আমাদের কাছে ছিল জনগণের স্বর।
অশেষ: আমি যখন সাংবাদিকতা করতাম, আপনাদের মতামত খুব কাছ থেকে দেখেছি। আপনি ছিলেন আলাদা — সংগঠক, কিন্তু ভেতর থেকে পাঠকও। কথাবার্তায় ব্যঞ্জনা ছিল, তীক্ষ্ণতা ছিল। আজ সেসব নেই। শুধু স্লোগান আর ভিন্নমত দমন।
রজতাভ: (গম্ভীরভাবে) দল চালাতে গেলে কঠোরতা দরকার, কিন্তু সেই কঠোরতা যদি চেতনার জায়গায় হয়, তা ভালো। যদি মানুষের কথা থামিয়ে দেয়, তা ভয়ংকর।
অশেষ: আজ তো প্রশ্ন তোলাই যেন অপরাধ। যারা প্রশ্ন করে, তারা দলের শত্রু হয়ে যায়।
রজতাভ: তুমি মনে রেখো, প্রশ্ন করাই সত্যিকারের আনুগত্যের প্রথম ধাপ। নিঃশব্দ আনুগত্য শেষ পর্যন্ত সর্বনাশ ডেকে আনে।
অশেষ: আপনার মৃত্যুর পর বামপন্থার ভারসাম্যটাই ভেঙে পড়লো। আপনি ছিলেন বোঝাপড়ার কেন্দ্রে। এখনকার নেতৃত্ব যেন নিজের ছায়াকেও ভয় পায়।
রজতাভ: আমি চলে যাওয়ার পর অনেকেই বলেছিল, ‘পার্টি’র হৃদয়টা আর কাঁপে না। কিন্তু পার্টির মৃত্যু হয়নি, শুধু দিশা হারিয়েছে। সেই দিশা হয়তো তোমাদের মধ্যেই আছে।
অশেষ: (কিছুটা বিস্ময়ে) আমাদের মধ্যেই? কিন্তু আমরা তো অনেকেই ভিন্ন পথে, ভিন্ন দলের মানুষ।
রজতাভ: দল বদলায়, সময় বদলায়। কিন্তু মানুষের কথা বলার সাহস — সেটাই আসল বামপন্থা। সেটা কেবল পার্টির মিটিংয়ে নয়, গরিবের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে হয়।
অশেষ: আপনি থাকলে বোধহয় আমরা আরও শিখতে পারতাম—কীভাবে রাজনীতিকে নরম রাখা যায়, অথচ নীতিতে অনড় থাকা যায়।
রজতাভ: তোমরা যদি প্রশ্ন করতে শেখো, যদি মানুষের কান্নাকে খবর বানাও, আর পেটের খিদের বদলে ভোটের অঙ্ক না ধরো—তবে রাজনীতি এখনও বাঁচবে। আলো এখনও জ্বলে।
সম্পাদকীয় টিমের বক্তব্য : সব চরিত্র কাল্পনিক। এর সঙ্গে কোনও ব্যক্তি বা বাস্তব ঘটনার মিল থাকলে তা অনঅভিপ্রেত। এর বিশেষত হল, এই কাল্পনিক আলাপ চ্যাটজপিটি লিখেছে। অনেকেই বলে থাকেন চ্যাটজিপিটি বাংলায় ঠিকভাবে কাজ করে না। কিন্তু আমরা বাস্তবসম্মত একটি সংলাপ লেখাতে পেরেছি। একটি একটি পরীক্ষামূলক প্রয়াস। এখানে কাউকে মহিমান্বিত করা বা হেয় করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল বা অমিল খোঁজার চেষ্টা না করাই ভাল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন