বুদ্ধদেব গুহর লেখায় প্রকৃতি ও প্রেমের মিশ্রণে যে ধীর, গভীর রোমান্টিকতা ছিল, তা কি আজকের বাংলা সাহিত্যে বিলুপ্ত? নগ্ন বাস্তবতাকে সাহসী বলব, না শূন্য?
বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে রোমান্টিকতার যে ধ্রুপদী ছবিটি আঁকা ছিল, তার অনেকটাই রঙিন তুলির টানে গড়ে দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। তাঁর লেখায় প্রকৃতি ছিল এক সর্বগ্রাসী অনুষঙ্গ—নদী, বন, পাহাড়, অরণ্য, নিঃসঙ্গতা, শিকার, প্রেম—সব মিলিয়ে এক স্বপ্নদেখা জগৎ, যেখানে পাঠক প্রবেশ করে নিজের ক্লান্ত নাগরিক সত্তাকে ফেলে আসতে পারত কিছু সময়ের জন্য।
‘মাধুকরী’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, কিংবা ‘সাবর্ণ চরিত’—বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাস বা ছোটগল্পে প্রেম এসেছে পরিশীলিত, পরিণত ও প্রায়শই অনুচ্চারিত ভাবে। নারীর প্রতি আকর্ষণ, শরীরের দিকে তাকানো, কামনার মৃদু ঢেউ—সব কিছুই ছিল সেখানে, কিন্তু কখনও নগ্ন ছিল না। বরং তাঁর রচনায় প্রেম মানে ছিল দেহ ও আত্মার এক সুসামঞ্জস্য গন্ধ; যৌনতা মানে ছিল প্রকৃতি ও মানব শরীরের অন্তরঙ্গতায় মিলন।
আজকের বাংলা সাহিত্যের দিকে তাকালে এই রোমান্টিকতার পর্দা যেন একরকম ছিঁড়ে গিয়েছে। ভাষা হয়েছে নগ্নতর, আবেগ হয়েছে কাঁচা, দেহ এসেছে আগে, হৃদয় পরে। সামাজিক ট্যাবু ভাঙার নামে বহু লেখক শরীরের বিবরণে এতটাই নিমগ্ন হয়ে পড়েন যে, প্রেম ও কামনার সূক্ষ্ম বুনন আর স্পর্শ করে না। বরং কেবল চমকে দেওয়ার খেলা, পাঠককে ‘ধাক্কা’ দেওয়ার প্রয়াস, অথবা বাজারমুখী লেখার প্রতিযোগিতায় একরকম জৈবিক প্রকাশই হয়ে উঠেছে আধুনিক সাহিত্যের এক মুখ্য হাতিয়ার।
একটা সময় ছিল, যখন ভালোবাসা বলতে বোঝাত, ‘অপেক্ষা’, ‘বিরহ’, ‘বিষণ্ণতা’, ‘রাতের চুপচাপ কুয়াশা’—আর এখন ভালোবাসা যেন ঘনঘন চ্যাট, ইনবক্স, আর দ্রুত শরীরী সঙ্গম। সাহিত্যেও তার প্রতিফলন হচ্ছে। এটা কি সময়ের দাবি? নাকি পাঠকের রুচির বদল? নাকি লেখকের আর প্রকৃতির সঙ্গে হৃদ্যতা নেই?
বুদ্ধদেব গুহর লেখায় যে প্রেম ছিল, তা ছিল সপ্রশ্ন, কিন্তু আত্মমগ্ন। বর্তমান সাহিত্যে যে প্রেমের ছবি আঁকা হচ্ছে, তা অনেক সময়ই হয় প্রথা-ভাঙার নামে শক-ভ্যালু বাড়ানো, নয়তো স্ববিরোধিতার চমক। একদিকে নারীবাদ, অন্যদিকে নারীর শরীরের বস্তুকরণ—এই দ্বৈততা অনেক সমসাময়িক লেখায় চোখে পড়ে।
তবে কি বুদ্ধদেব গুহর প্রেম অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল? মোটেই নয়। বরং এই দ্রুত বদলে যাওয়া সময়েই তাঁর প্রেমের ধরন আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠছে। সেই প্রেম যা শুধুই শারীরিক নয়, আবার শরীরকে অস্বীকারও করে না। সেই প্রেম যা নিঃশব্দে গড়ে ওঠে, চোখের চাহনিতে ফোটে, বা একটুখানি ছোঁয়ার মধ্যে জেগে ওঠে। তাঁর প্রেমে জঙ্গলের নির্জনতা যেমন আছে, তেমনই আছে শহরের ক্লান্তির পরশ।
সমসাময়িক নগ্ন বাস্তবতা হয়তো সাহসী, তবে সেটি যদি কেবল ত্বকের নিচে ঢুকতে না পারে, তাহলে তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। বুদ্ধদেব গুহ আমাদের শিখিয়েছিলেন, প্রেম কেবল শরীরের ভিতর দিয়ে নয়, প্রকৃতির, নিঃসঙ্গতার, একাকীত্বের, এমনকি শিকারি জীবনের ভিতর দিয়েও প্রবাহিত হয়।
তাঁর রোমান্টিকতা তাই আজও সময়ের বাইরেও প্রাসঙ্গিক। কারণ, আজকের যুগে আমরা যেটা হারিয়েছি, সেটি হঠাৎ শরীর নয়, হঠাৎ ভালোবাসার ধৈর্য।
‘মাধুকরী’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, কিংবা ‘সাবর্ণ চরিত’—বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাস বা ছোটগল্পে প্রেম এসেছে পরিশীলিত, পরিণত ও প্রায়শই অনুচ্চারিত ভাবে। নারীর প্রতি আকর্ষণ, শরীরের দিকে তাকানো, কামনার মৃদু ঢেউ—সব কিছুই ছিল সেখানে, কিন্তু কখনও নগ্ন ছিল না। বরং তাঁর রচনায় প্রেম মানে ছিল দেহ ও আত্মার এক সুসামঞ্জস্য গন্ধ; যৌনতা মানে ছিল প্রকৃতি ও মানব শরীরের অন্তরঙ্গতায় মিলন।
আজকের বাংলা সাহিত্যের দিকে তাকালে এই রোমান্টিকতার পর্দা যেন একরকম ছিঁড়ে গিয়েছে। ভাষা হয়েছে নগ্নতর, আবেগ হয়েছে কাঁচা, দেহ এসেছে আগে, হৃদয় পরে। সামাজিক ট্যাবু ভাঙার নামে বহু লেখক শরীরের বিবরণে এতটাই নিমগ্ন হয়ে পড়েন যে, প্রেম ও কামনার সূক্ষ্ম বুনন আর স্পর্শ করে না। বরং কেবল চমকে দেওয়ার খেলা, পাঠককে ‘ধাক্কা’ দেওয়ার প্রয়াস, অথবা বাজারমুখী লেখার প্রতিযোগিতায় একরকম জৈবিক প্রকাশই হয়ে উঠেছে আধুনিক সাহিত্যের এক মুখ্য হাতিয়ার।
একটা সময় ছিল, যখন ভালোবাসা বলতে বোঝাত, ‘অপেক্ষা’, ‘বিরহ’, ‘বিষণ্ণতা’, ‘রাতের চুপচাপ কুয়াশা’—আর এখন ভালোবাসা যেন ঘনঘন চ্যাট, ইনবক্স, আর দ্রুত শরীরী সঙ্গম। সাহিত্যেও তার প্রতিফলন হচ্ছে। এটা কি সময়ের দাবি? নাকি পাঠকের রুচির বদল? নাকি লেখকের আর প্রকৃতির সঙ্গে হৃদ্যতা নেই?
বুদ্ধদেব গুহর লেখায় যে প্রেম ছিল, তা ছিল সপ্রশ্ন, কিন্তু আত্মমগ্ন। বর্তমান সাহিত্যে যে প্রেমের ছবি আঁকা হচ্ছে, তা অনেক সময়ই হয় প্রথা-ভাঙার নামে শক-ভ্যালু বাড়ানো, নয়তো স্ববিরোধিতার চমক। একদিকে নারীবাদ, অন্যদিকে নারীর শরীরের বস্তুকরণ—এই দ্বৈততা অনেক সমসাময়িক লেখায় চোখে পড়ে।
তবে কি বুদ্ধদেব গুহর প্রেম অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল? মোটেই নয়। বরং এই দ্রুত বদলে যাওয়া সময়েই তাঁর প্রেমের ধরন আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠছে। সেই প্রেম যা শুধুই শারীরিক নয়, আবার শরীরকে অস্বীকারও করে না। সেই প্রেম যা নিঃশব্দে গড়ে ওঠে, চোখের চাহনিতে ফোটে, বা একটুখানি ছোঁয়ার মধ্যে জেগে ওঠে। তাঁর প্রেমে জঙ্গলের নির্জনতা যেমন আছে, তেমনই আছে শহরের ক্লান্তির পরশ।
সমসাময়িক নগ্ন বাস্তবতা হয়তো সাহসী, তবে সেটি যদি কেবল ত্বকের নিচে ঢুকতে না পারে, তাহলে তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। বুদ্ধদেব গুহ আমাদের শিখিয়েছিলেন, প্রেম কেবল শরীরের ভিতর দিয়ে নয়, প্রকৃতির, নিঃসঙ্গতার, একাকীত্বের, এমনকি শিকারি জীবনের ভিতর দিয়েও প্রবাহিত হয়।
তাঁর রোমান্টিকতা তাই আজও সময়ের বাইরেও প্রাসঙ্গিক। কারণ, আজকের যুগে আমরা যেটা হারিয়েছি, সেটি হঠাৎ শরীর নয়, হঠাৎ ভালোবাসার ধৈর্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন