রাজনীতি যদি বিশ্বাসভিত্তিক হয়, তবে বিভেদের বীজ বপন করে কখনও কি ‘এক ভারত’ গড়া যায়?
একদিকে মোদি সরকারের গলা ফাটানো ঘোষণা—৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীরকে একীভূত করা হয়েছে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। তা নাকি "এক দেশ, এক সংবিধান, এক পতাকা"র প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ। পাহাড় ঘেরা ভূস্বর্গকে রেললাইনে বেঁধে ফেলা হচ্ছে দিল্লি-মুম্বাইয়ের সঙ্গে—কাজেই উন্নয়ন আর জাতীয়তাবাদের সারথি হয়ে উঠছে অবরুদ্ধ উপত্যকা। কিন্তু ঠিক সেই দলেরই এক বিধায়ক—পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা—এক সভায় দাঁড়িয়ে নিদান দিয়েছেন, “মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে যাবেন না। সেখানে গিয়ে প্রাণসংশয় হতে পারে।”
কী ভয়াবহ রকমের দ্বিচারিতা! একদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা কাশ্মীরকে ভারতের গর্ব বলে জাহির করছেন, অন্যদিকে তাঁদের রাজ্যস্তরের নেতারা কাশ্মীরকে একরকম পররাষ্ট্র মনে করে ভীতি, অবিশ্বাস এবং মুসলিমবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। এ কেমন জাতীয়তাবাদ? এ কেমন ‘এক ভারত’?
কথায় বলে, বাঘের দুধ খেলে বাঘ হওয়া যায় না—মুখে গেরুয়া কাপড় জড়িয়ে দেশপ্রেমী সাজলেই আত্মিক সংহতি আসে না। বিজেপির অনেক নেতা-কর্মী আজও কাশ্মীরকে ভারত বলে মানতে চান না—তাঁদের কাছে কাশ্মীর এখনও এক শত্রুপ্রদেশ, কারণ সেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। অতএব এই ঘৃণা, এই বিভেদ, এই দূরত্ব। অথচ তাঁরাই আবার ভোটের ময়দানে কাশ্মীরকে বেচেন, ‘উন্নয়নের গল্প’ শোনান, সেনার ত্যাগকে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। দিনের আলোয় কাশ্মীর নিয়ে সেলফি, রাতে কাশ্মীরি মুসলিম নিয়ে কুৎসা। এ এক আজব দ্বিচারিতা!
প্রশ্ন হচ্ছে, ৩৭০ তুলে দেওয়া মানে কি শুধু প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা? না কি এক গভীর ঐক্যবোধ, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করা? মোদি সরকার বলেছিল, কাশ্মীরকে এখন আর ‘বিশেষ’ চোখে দেখা হবে না, তাকে অবশেষে ‘ভারতের সমান’ করে তোলা হবে। কিন্তু তাঁর দলের বিধায়ক যখন মুখের ওপর বলেন, ‘মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যাব না’, তখন সে ঘোষণার ভিত্তিই হেলে পড়ে।
এই বক্তব্য শুধুই ব্যক্তিগত মত নয়। এটি এক রাজনৈতিক মানসিকতার প্রতিফলন—যেখানে ‘মুসলিম’ শব্দটি একটি আপরাধ, একটি অসহ্য উপস্থিতি। এই মানসিকতা শুধু কাশ্মীর নয়, ভারতবর্ষের বহুত্ববাদকেই অস্বীকার করে। ধর্মের ভিত্তিতে অঞ্চলকে বয়কট করা আর পাকিস্তানের ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’-এর মধ্যে ফারাক কোথায়?
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই বক্তব্যকে যতই ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে ধামাচাপা দিতে চাক না কেন, তার অভিঘাত শুধু কাশ্মীর নয়—পুরো দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনায় লাগে। কাশ্মীরবাসী কী বার্তা পেল? তাঁরা কি সত্যিই ভারতের মূলধারার অংশ হলেন? না কি শুধু শিরায়-শিরায় ঘুরছে সন্দেহ, অবিশ্বাস, এবং ‘তুমি আমাদের মতো নও’—এই হীন দৃষ্টি?
রাজনীতি যদি বিশ্বাসভিত্তিক হয়, তবে এভাবে বিভেদের বীজ বপন করে কখনও ‘এক ভারত’ গড়া যায় না। বিজেপি যদি সত্যিই কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে মনে করে, তবে তার প্রতিটি নেতাকে, ছোট হোক বড় হোক, কাশ্মীরকে ভারতবর্ষের সমান সম্মান দিতে হবে। না হলে ৩৭০ তুলে দিলেও, মানসিক প্রাচীরটা রয়েই যাবে।
সেই প্রাচীর ভাঙবে কবে? যখন রাজনীতি কৌশলের জায়গা ছেড়ে হৃদয়ের জায়গায় পৌঁছবে। যখন কাশ্মীর শুধু ভোটের ইস্যু নয়, এক সমান অধিকারভিত্তিক সমাজের অংশ হয়ে উঠবে। আর তার আগে, এই দ্বিচারিতার মুখোশগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। মুখে একতা আর অন্তরে বিদ্বেষ নিয়ে কোনও দেশ, কোনও জাতি, কোনও কাশ্মীরই এগোতে পারে না।
একদিকে মোদি সরকারের গলা ফাটানো ঘোষণা—৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীরকে একীভূত করা হয়েছে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। তা নাকি "এক দেশ, এক সংবিধান, এক পতাকা"র প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ। পাহাড় ঘেরা ভূস্বর্গকে রেললাইনে বেঁধে ফেলা হচ্ছে দিল্লি-মুম্বাইয়ের সঙ্গে—কাজেই উন্নয়ন আর জাতীয়তাবাদের সারথি হয়ে উঠছে অবরুদ্ধ উপত্যকা। কিন্তু ঠিক সেই দলেরই এক বিধায়ক—পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা—এক সভায় দাঁড়িয়ে নিদান দিয়েছেন, “মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে যাবেন না। সেখানে গিয়ে প্রাণসংশয় হতে পারে।”
কী ভয়াবহ রকমের দ্বিচারিতা! একদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা কাশ্মীরকে ভারতের গর্ব বলে জাহির করছেন, অন্যদিকে তাঁদের রাজ্যস্তরের নেতারা কাশ্মীরকে একরকম পররাষ্ট্র মনে করে ভীতি, অবিশ্বাস এবং মুসলিমবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। এ কেমন জাতীয়তাবাদ? এ কেমন ‘এক ভারত’?
কথায় বলে, বাঘের দুধ খেলে বাঘ হওয়া যায় না—মুখে গেরুয়া কাপড় জড়িয়ে দেশপ্রেমী সাজলেই আত্মিক সংহতি আসে না। বিজেপির অনেক নেতা-কর্মী আজও কাশ্মীরকে ভারত বলে মানতে চান না—তাঁদের কাছে কাশ্মীর এখনও এক শত্রুপ্রদেশ, কারণ সেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। অতএব এই ঘৃণা, এই বিভেদ, এই দূরত্ব। অথচ তাঁরাই আবার ভোটের ময়দানে কাশ্মীরকে বেচেন, ‘উন্নয়নের গল্প’ শোনান, সেনার ত্যাগকে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। দিনের আলোয় কাশ্মীর নিয়ে সেলফি, রাতে কাশ্মীরি মুসলিম নিয়ে কুৎসা। এ এক আজব দ্বিচারিতা!
প্রশ্ন হচ্ছে, ৩৭০ তুলে দেওয়া মানে কি শুধু প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা? না কি এক গভীর ঐক্যবোধ, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করা? মোদি সরকার বলেছিল, কাশ্মীরকে এখন আর ‘বিশেষ’ চোখে দেখা হবে না, তাকে অবশেষে ‘ভারতের সমান’ করে তোলা হবে। কিন্তু তাঁর দলের বিধায়ক যখন মুখের ওপর বলেন, ‘মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যাব না’, তখন সে ঘোষণার ভিত্তিই হেলে পড়ে।
এই বক্তব্য শুধুই ব্যক্তিগত মত নয়। এটি এক রাজনৈতিক মানসিকতার প্রতিফলন—যেখানে ‘মুসলিম’ শব্দটি একটি আপরাধ, একটি অসহ্য উপস্থিতি। এই মানসিকতা শুধু কাশ্মীর নয়, ভারতবর্ষের বহুত্ববাদকেই অস্বীকার করে। ধর্মের ভিত্তিতে অঞ্চলকে বয়কট করা আর পাকিস্তানের ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’-এর মধ্যে ফারাক কোথায়?
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই বক্তব্যকে যতই ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে ধামাচাপা দিতে চাক না কেন, তার অভিঘাত শুধু কাশ্মীর নয়—পুরো দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনায় লাগে। কাশ্মীরবাসী কী বার্তা পেল? তাঁরা কি সত্যিই ভারতের মূলধারার অংশ হলেন? না কি শুধু শিরায়-শিরায় ঘুরছে সন্দেহ, অবিশ্বাস, এবং ‘তুমি আমাদের মতো নও’—এই হীন দৃষ্টি?
রাজনীতি যদি বিশ্বাসভিত্তিক হয়, তবে এভাবে বিভেদের বীজ বপন করে কখনও ‘এক ভারত’ গড়া যায় না। বিজেপি যদি সত্যিই কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে মনে করে, তবে তার প্রতিটি নেতাকে, ছোট হোক বড় হোক, কাশ্মীরকে ভারতবর্ষের সমান সম্মান দিতে হবে। না হলে ৩৭০ তুলে দিলেও, মানসিক প্রাচীরটা রয়েই যাবে।
সেই প্রাচীর ভাঙবে কবে? যখন রাজনীতি কৌশলের জায়গা ছেড়ে হৃদয়ের জায়গায় পৌঁছবে। যখন কাশ্মীর শুধু ভোটের ইস্যু নয়, এক সমান অধিকারভিত্তিক সমাজের অংশ হয়ে উঠবে। আর তার আগে, এই দ্বিচারিতার মুখোশগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। মুখে একতা আর অন্তরে বিদ্বেষ নিয়ে কোনও দেশ, কোনও জাতি, কোনও কাশ্মীরই এগোতে পারে না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন