কেন শ্রম কোডের বিরোধিতা?

এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নয়া আইনের খসড়া গাইডলাইন তৈরি করেছে। বাংলা থেকে শুরু করে কয়েকটি রাজ্য এর বিরোধিতা করেছে। ফলে দেশজুড়ে এই বিধি এখনও কার্যকর করা যায়নি।

কেন শ্রম কোডের বিরোধিতা?

ভারতের একেক রাজ্যে একেক রকম শ্রম আইন বিদ‌্যমান। এক এক রাজ্যে শ্রমিকদের এক এক রকম মজুরি। আলাদা আলাদা নিয়মে বেতন কাঠামো, একই সংস্থায় কাজ করেও রাজ্যভিত্তিতে শ্রমের পরিমাণ এবং পারিশ্রমিক আলাদা। শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বিধি ভিন্ন। এইসব জটিলতা কাটাতে নতুন শ্রম আইন চালুর প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৪৪টি আলাদা আলাদা শ্রম আইনকে সংগঠিত করে চারটি শ্রম কোড চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয় নতুন শ্রম আইনে।

কেন্দ্রের নতুন শ্রম কোডগুলির কিছু ইতিবাচক দিক যেমন প্রশাসনিক সরলীকরণ ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বৃদ্ধি রয়েছে, তেমনি এদের কিছু নেতিবাচক দিক বা সমালোচিত দিকও আছে। এখানে সেগুলি আলোচনা করা হল–

১. স্ট্রাইক বা ধর্মঘট করার অধিকার সংকুচিত
নতুন Industrial Relations Code অনুযায়ী, ধর্মঘট করার আগে ১৪ দিনের নোটিশ বাধ্যতামূলক। "Essential services"-এ ধর্মঘট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, যা শ্রমিকদের সংগঠিত প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে।
অনেক ক্ষেত্রেই Trade Union-এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

২. কর্মঘণ্টা বৃদ্ধির আশঙ্কা
নতুন কোডে দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের অনুমতি রাখা হয়েছে, যদিও সাপ্তাহিক সীমা ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম শ্রমিকদের দীর্ঘ সময় কাজ করাতে ব্যবহৃত হতে পারে, বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে।

৩. চুক্তিভিত্তিক শ্রম (Contractualisation) বৈধতা পায়
নতুন শ্রম কোড চুক্তিভিত্তিক কর্মপ্রথাকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা দেয়।
এতে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং নিয়োগকারী সংস্থা দায় এড়াতে পারবে।

৪. 'Fixed Term Employment'-এর মাধ্যমে চাকরি অনিশ্চিত
কোনও স্থায়ী পদের জন্যও এখন "fixed term" নিয়োগ দেওয়া যাবে।
ফলে পুনর্নিয়োগ বা পুনর্বহাল-এর অধিকার খর্ব হয়; শ্রমিক অনিশ্চয়তায় থাকবেন।

৫. সামাজিক সুরক্ষা বাস্তবে দুর্বল রয়ে যেতে পারে
Social Security Code-এ গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও:
কবে, কীভাবে এবং কোন খাতে তা বাস্তবায়িত হবে, তা পরিষ্কার নয়।
অনেক ক্ষেত্রেই ‘নথিভুক্ত’ না হওয়া শ্রমিকরা বাইরে থাকবেন।

৬. রাজ্যগুলোর ওপর অতিরিক্ত দায়
কেন্দ্র আইন করেছে, কিন্তু বাস্তবায়ন ও Rules প্রণয়ন রাজ্য সরকারের উপর।
অনেক রাজ্য এখনও নিয়ম তৈরি করতে পারেনি, ফলে আইন বাস্তবে অচলাবস্থা সৃষ্টি করছে।

৭. মালিকপক্ষ (Employers) কে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে
নিয়োগ, ছাঁটাই ও ছুটির ক্ষেত্রে মনিবপক্ষকে অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
৩০০ জন পর্যন্ত কর্মী থাকলে কোনও অনুমতি ছাড়াই ছাঁটাই করা যাবে (আগে এই সীমা ছিল ১০০)।

৮. সার্বিকভাবে শ্রমিক অধিকার ক্ষয়
বহু শ্রমিক সংগঠন মনে করে, এই কোডগুলো শ্রমিকদের ঐতিহাসিক অধিকারগুলোকে হ্রাস করেছে।
মূলত শ্রমিককে উৎপাদনের যন্ত্রে পরিণত করার ঝুঁকি তৈরি করছে।

৯. গোপনীয়তা ও স্বচ্ছতার অভাব
অনেক নিয়মেই স্পষ্টতা নেই – যেমন ওভারটাইমের হার, PF-র নতুন গঠন, গিগ কর্মীদের প্রকৃত সুবিধা ইত্যাদি।

এটা শ্রমিক ও নিয়োগদাতা উভয়ের জন্য দ্বিধা তৈরি করে।

এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নয়া আইনের খসড়া গাইডলাইন তৈরি করেছে। বাংলা থেকে শুরু করে কয়েকটি রাজ্য এর বিরোধিতা করেছে। ফলে দেশজুড়ে এই বিধি এখনও কার্যকর করা যায়নি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন