‘OPEN’ নিয়ে বিতর্ক: অ-একগামী সম্পর্ক নয়, বরং নির্যাতনের স্মৃতিকথা—প্রশ্ন দানা বাঁধছে

বইটি পড়তে পড়তে স্পষ্ট হয়, র‍্যাচেল–অ্যাডামের সম্পর্কটি প্রকৃতপক্ষে ছিল অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক ও মানসিকভাবে নির্যাতনমূলক।


দেবাশিস কর্মকার

র‍্যাচেল ক্রান্টজের Open: An Uncensored Memoir of Love, Liberation, and Non-Monogamy প্রকাশের পরই আন্তর্জাতিক সাহিত্যমহলে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। বইটির নাম দেখে মনে হতে পারে, বহুগামী সম্পর্ক, পলিআমরি কিংবা ওপেন রিলেশনশিপের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্পষ্ট ও গবেষণাভিত্তিক আলোচনাই হয়তো পাঠক পাবেন। কিন্তু বইটি পড়তে শুরু করে অনেকেই বুঝেছেন—এটি আসলে সেই প্রতিশ্রুত বিষয় থেকে অনেকটাই সরে যায়।

লেখিকা র‍্যাচেল ক্রান্টজের জীবনে অ্যাডামের আগমনে শুরু হয় এই স্মৃতিকথার মূল কাহিনি। অ্যাডাম শুরু থেকেই সম্পর্ককে একচেটিয়া মানতে রাজি ছিলেন না, কিন্তু র‍্যাচেলকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি সব সময় তার প্রতিই ‘কমিটেড’ থাকবেন। এই সম্পর্কের মধ্য দিয়েই র‍্যাচেলের সামনে দু’ধরনের সুযোগ তৈরি হয়—নিজের আকাঙ্ক্ষা ও সীমারেখাকে নতুনভাবে দেখার, এবং একই সঙ্গে অ-একগামী সম্পর্কের সমাজতাত্ত্বিক বাস্তবতা নিয়ে এক ধরনের সাংবাদিক অনুসন্ধান চালানোর।

তবে বইটির উপশিরোনামের প্রতিশ্রুতি—‘censored memoir of love, liberation and non-monogamy’—সমালোচকদের মতে, বাস্তবে খুব একটা পূরণ হয়নি। এটি অবশ্যই একটি ‘censored’ ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা, কিন্তু অ-একগামী সম্পর্কের যে কাঠামো, মনস্তত্ত্ব বা অভিজ্ঞতার কথা বইটি আভাস দেয়, তার সঠিক প্রতিফলন নেই বলেই মত সমালোচকদের।

বইটি পড়তে পড়তে স্পষ্ট হয়, র‍্যাচেল–অ্যাডামের সম্পর্কটি প্রকৃতপক্ষে ছিল অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক ও মানসিকভাবে নির্যাতনমূলক। অ্যাডামের আচরণে ছিল অবিরাম গ্যাসলাইটিং, প্রভাব খাটানো, এবং ‘কনসেন্ট’ শব্দটির প্রতিও এক ধরনের অস্বস্তি—যা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বিস্ময়করভাবে, র‍্যাচেল নিজেই বহু জায়গায় অ্যাডামের আচরণকে নানাভাবে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। বইয়ের শেষ ৩০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তিনি সম্পর্কের ভয়াবহতা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেননি বলেই মনে হয়। এমনকি ‘অ্যাকনলেজমেন্টস’-এও ওই সম্পর্কের প্রতি তার সমর্থন ও দ্বিধা একসঙ্গে ফুটে উঠেছে।

সমালোচকদের বক্তব্য, নির্যাতন যে কোনও ধরনের সম্পর্কেই ঘটতে পারে—এটি উপলব্ধির মূল্য রয়েছে অবশ্যই। কিন্তু র‍্যাচেলের বর্ণনায় সম্পর্কটিকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন অ-একগামী সম্পর্কের অংশ হিসেবেই এই মানসিক দমন-পীড়ন স্বাভাবিক। এই দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক বলেই মনে করছেন অনেকে, কারণ এতে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন, এবং ওপেন রিলেশনশিপ বা পলিআমরি সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে, এই বইকে অনেকেই দেখছেন একজন নারীর গভীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নির্মম সততার দলিল হিসেবে—যেখানে তিনি নিজের ভেতরের আলো-অন্ধকার প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। তবে বইটি অ-একগামী সম্পর্কের ধারণা নিয়ে যে ‘গাইডবুক’ হওয়ার দাবি করে, তা পূরণ হয়েছে কি না—তা নিয়েই এখন সবচেয়ে বড় বিতর্ক।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন